#আল_হাদীসের_অবৈজ্ঞানিক_ভুলের_বৈজ্ঞানিক_দৃষ্টিকোণ
সিরিজ পর্ব-১৩
সত্যিই কি আমাদের মেরুদন্ডের নিম্নাংশের হাড় ক্ষয় হয় না বা মাটিতে মিশে যায় না?
আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ
মিশকাত থেকে হাদীসটা প্রথমে উল্লেখ করছি এখানে -
অতঃপর তিনি (সা.) বলেছেন, মেরুদণ্ডের নিম্নাংশের একটি হাড় ছাড়া মানবদেহের সকল কিছুই মাটিতে গলে বিলীন হয়ে যাবে এবং কিয়ামতের দিন সেই হাড্ডি হতে গোটা দেহের পুনর্গঠন করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
( মিশকাত-৫৫২১)
পুরো হাদীসটার লিংক -
https://www.hadithbd.com/hadith/email/?id=85499
হাদীস বুঝার একটা ভালো উপায় হলো সেই হাদীসটাকে কোরআনের মাধ্যমে বিচার করা। তাই আমি এখানে হাড় সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত পেশ করতে চাই। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন -
আর সে আমাদের জন্য একটি উদাহরণ পেশ করে এবং নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে, "কে হাড়গুলোকে জীবিত করবে যখন সেগুলো পচে যাবে?"
বলুন, "যিনি প্রথমবার তাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনিই তাদেরকে জীবিত করবেন; এবং তিনি সকল সৃষ্টি সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।"
তিনিই তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমরা তা থেকে প্রজ্বলিত করো।
যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, [তাই সত্য]; এবং তিনি সর্বজ্ঞ স্রষ্টা।
তাঁর আদেশ কেবল তখনই যখন তিনি কোন কিছু করতে চান, তখন তিনি তাকে বলেন, "হও", আর তা হয়ে যায়।
অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সকল কিছুর রাজত্ব, এবং তাঁরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে। ( কুরআন, সূরা ইয়াসিন -৩৬/৭৮-৮৩)
সূরা ইয়াসিন -৭৮ নং আয়াতটা লক্ষ্য করুন, এখানে বলা হচ্ছে যে " সকল হাড় গলে যাবে " এই আয়াতে সামগ্রিক এর কথায় বুঝানো হচ্ছে মানে সকল হাড় নাশ হয়ে যাবে। বাস্তবিক অর্তে এই আয়াত ঠিকই বলেছে কেননা সকল হাড় নাশ হয়ে যায়, কিন্তু হাদীসে বলা হচ্ছে যে " মেরুদন্ডের নিম্নাংশের একটা হাড় গলবে না! " তো যেহেতু এই কথাটা কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হচ্ছে তাই আমাদের এখানে ধরে নিতে হবে যে " এই হাদীসে নিম্নাংশের হাড় নাশ হবে না " বলতে আলাদা কোনো কিছু উদ্দেশ্য করা হচ্ছে । ফাতহুল বারীতে ( বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ) বলা হয়েছে যে " কোনো কোনো মুহাদ্দিসের মতে এ হাদিসের অর্থ হচ্ছে, পশ্চাদ্দেশের হাড় একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং এরপর এটি অন্যান্য সব হাড়ের মতোই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় "( সংগৃহীত ) আর আমিও এখানে একমত যে হাড়গুলো এক সময় ক্সয় হবে কেননা কোরআন এর সমর্থন দিয়েছে। এখন হতে পারে যে " নিম্নাংশের একটা হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হবে না " এটা দ্বারা এই বিষয়ে জোর করা হচ্ছে যে " অন্যান্য হাড়ের চেয়ে সে অংশের হাড় অনেক দৃঢ আর সেটা সহজে ক্ষয় হবে না! " । আরবি ব্যাকরণে আর নসে আমরা এরকম অনেক উদাহরণ পেয়ে থাকি যে " ব্যাপকজোর দেওয়া জন্য ব্যাপক অর্থের শব্দ ব্যবহার করা হয় তার গুরুত্ব বুঝাতে " যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল সে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ করল ( মুসলিম-১৩৮০) এখন আমার কথা হলো যারা ফজরের নামায পড়েন না তাদের কি আল্লাহ নিরাপত্তা দেন না? উত্তহলো অবশ্যই দেন! আল্লাহ নিরাপত্তা সকলকে দেন,তো আল্লাহ যদি সকলকেই নিরাপত্তা দেন তাহলে হাদীসে কেন বলা হলে " ফজরের নামায আদায়কারীকে নিরাপত্তা দেন? এর জবাব হলো " ফজরের নামাযের গুরুত্বপূর্ণতা বুঝান। অর্থাৎ অনেক বিষয়ের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে হাদীসে এমন ভাবে বলা হয় যেটা দ্বারা একটা বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আছে তা উদ্দেশ্য করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো " নিম্নাংশের হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হবে না " এটা দ্বারা আসলে কি গুরুত্ব উদ্দেশ্য? এর জবাব হাদীসেই আছে, সেখানে বলা হয়েছে যে " অতঃপর তিনি (সা.) বলেছেন, মেরুদণ্ডের নিম্নাংশের একটি হাড় ছাড়া মানবদেহের সকল কিছুই মাটিতে গলে বিলীন হয়ে যাবে এবং কিয়ামতের দিন সেই হাড্ডি হতে গোটা দেহের পুনর্গঠন করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
( মিশকাত-৫৫২১) হাদীসে বলা হচ্ছে যে " যে হাড়টা গলে যাবে না সে হাড় দ্বারা আবার পুরো বডি গঠন করা হবে " অর্থাৎ এই হাদীসে যেটা বুঝাতে চেয়েছেন তা হলো " দেহের নিম্নাংশে একটা হাড় আছে যেটা দ্বারা কিয়ামতে আমার পুরো শরীল গঠন করা হবে " হাদীসদ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে ' নিম্নাংশের হাড় ক্ষয় হবে না! "। তো " নিম্নাংশের হাড় ক্ষয় হবে না " এতটুকু বাক্য দিয়ে মেহেদী হাসান হাদীসটাকেই এরকম করে বুঝে থাকি! এই বিষয়ে আল্লাহ রব্বুল আলামিন সঠিক জ্ঞান রাখেেন। উল্লেখ্য যে, হাদীসে এসেছে -
" আবু সাঈদ(রা.) থেকে অপর বর্ণনায় আছে, তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, এটি (পশ্চাদ্দেশের হাড় / মেরুদণ্ডের নিম্নাংশের হাড়) কেমন হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, এটি সরিষার দানার মতো। (আহমাদ ও ইবন হিব্বান)
এই হাদীস থেকে আমরা এটা বুঝতে পাচ্ছি যে " নিম্নাংশের বা পশ্চাদ্দেশের সে হাড় হলে সরিষার দানার মতো! "
এখন হতে পারে যে " আমাদের কবর দেওয়া হলে আমাদের পশ্চাদ্দেশের সে হাড়ের ক্ষুদ্র অংশ মাটিতে মিশে যায় যা আমরা খুজে পায় না, তো হতে পারে যে তা মাটিতে গভীর ভাবে মিশে যাওয়ার জন্য আমরা খুজে না পেয়ে বকি যে তা ক্ষয় হয়েছে। যদি এরকমটা হয় তাহলে বুঝতে হবে যে " হাদীসের বাণী ঠিক আছে, আর এটা নিয়ে গবেষণা করা উচিত, মানে কতগুলো কবর থেক মাটি সংগ্রহ করে সেখানে চেক করে দেখা উচিত যে " এমন কোনো হাড় অংশ পাওয়া যায় কিনা যা ক্ষয় হয় নি! " আর যদি এরকম পাওয়া যায় তাহলে তো হাদীসের বাণী সত্য হয়ে যাবে। তো এখন পযন্ত যেহেতু এরকম গবেষণা করা হয় নি তাই বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে আপাতত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে মুসলিম হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি যে এই সহীহ হাদীস সত্য! এবং তা নবীর বাণী...... । বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করে তা জাল বলে চালিয়ে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না.....
বাক বাকি আল্লাহ রব্বুল আলামিন ভালো জানেন!
কলমে : মোঃ মেহেদী হাসান ✍️
[ লেখার কিছু বিষয় ইসলামি ওয়েব থেকে নিয়েছি, যেমন ফাতহুল বারীর কওল + সরিষা দানার হাদীস! ]
[ তবে আমার এখানে একটা সন্দেহ আছে ইহুদি কাফেরদের উপর। বিবর্তনবাদী নাস্তিকরা লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর আগের ফসিল খুঁজে পায় মানুষ ( হোমো ইরেক্টাস, নিয়ান্ডারথাল ..) ডাইনাসোরসহ বিভিন্ন প্রাণীর। তো যারা লক্ষ কোটি বছর আগের ফসিল খুঁজে পায় তারা দাবি করে যে " হাদীসে বর্ণিত সরিষা দানার মতো হাড় " নাকি পাওয়া যায় না! যদি এত ফসিল খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে একটা হাড় অংশ কেন পাওয়া যাবে না? এমনটা কি হতে পারে না যে হাদীসে সত্য বলা হয়েছে কিন্তু একদম কাফের মুশরিক বা গোপন এজেন্ডা আমাদের বিভ্রান্ত করার জন্য সত্যটা লুকিয়ে রেখেছে আমাদের থেকে! যাতে মুসলিমদের বিভ্রান্ত করা যায়....? আপনাদের কি মতামত এই বিষয়ে? ]
#প্রিন্স_ফ্রেরাসে