সময়ই শেষ বিচারক
মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন
বিশ্লেষণধর্মী। ডিসেম্বর ২৬,২০২৫
আপনি কি কখনও ভেবেছেন—কিছু মানুষ বছরের পর বছর অন্যায় করেও নির্বিঘ্নে বাঁচে, আর কেউ সামান্য ভুলের জন্য ভেঙে পড়ে?
তাহলে প্রশ্ন আসে—বিচার কি সত্যিই হয়, নাকি আমরা শুধু নিজের সান্ত্বনা দিই?
প্রকৃতি তার হিসেব বাকি রাখে না। আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না।
এই দুটি বাক্য শোনতে সহজ, কিন্তু এর গভীরতা পাহাড়ের মতো ভারী। কারণ এগুলো শুধু ধর্মীয় নির্দেশনা নয়—এগুলো মানব জীবনের এক অপরিসীম বাস্তবতা।
আজকের সময়ে আমরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি যেখানে ক্ষমতা, টাকা ও প্রভাব মানুষের অন্যায় ঢেকে দেয়। তখন আমরা ভাবি—“বিচার কোথায়?”
এখানেই বড় বিভ্রান্তি। আমরা বিচারকে তাৎক্ষণিক ফলাফলের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলি। কিন্তু প্রকৃতি কখনো তাড়াহুড়ো করে না। সময় লাগে, নিখুঁত হিসাবের জন্য।
প্রকৃতির দিকে তাকান। একটি গাছ যদি নিয়ম ভেঙে বেড়ে ওঠে—শেকড় দুর্বল রেখে শুধু ডালপালা বাড়ায়—শুধু কিছুদিন ঝড় এড়িয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু একদিন ঝড় আসবেই। কোনো অজুহাত কাজে আসবে না।
ঠিক একইভাবে মানুষের জীবনেও।
আল্লাহ তা’আলা নিখুঁত বিচারক। তাঁর বিচারে কোনো পক্ষপাত নেই। তিনি পদ, পরিচয় বা অনুসারীর সংখ্যা দেখেন না। তিনি দেখেন শুধু নিয়ত, কাজ এবং তার প্রভাব। মানুষ মনে করে—“আমি তো ধরা পড়িনি।” কিন্তু আল্লাহর আদালতে ‘ধরা পড়া’ বলে কিছু নেই। সবকিছু নথিভুক্ত।
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো—আল্লাহ যখন ছাড় দেন, মানুষ সেটাকে অনুমতি মনে করে। আসলে, এটি পরীক্ষা। ক্ষমতা পেয়ে আপনি কি অন্যকে দমন করেছেন?
সুযোগ পেয়ে কি অন্যকে ঠকিয়েছেন?
দুর্বল কাউকে দেখে কি ন্যায় দেখিয়েছেন, নাকি নিজের স্বার্থে আচরণ করেছেন?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই ভবিষ্যতের রায়।
ইতিহাস দেখুন। কোনো জালেম চিরস্থায়ী হয়নি। কোনো অন্যায় সাম্রাজ্য টেকেনি। ইতিহাস শুধু বইয়ে নয়—আমাদের আশেপাশেও প্রতিটি অফিসে, পরিবারে, সমাজে এ প্রতিফলন ঘটে। যে আজ অন্যায় করছে, কাল সে নিজেই সঠিক মূল্য দিতে বাধ্য হবে। যে আজ মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে হাসছে, একদিন সে নিজের আয়নায় চোখ রাখতে পারবে না।
বিচার সবসময় বজ্রপাতের মতো আসে না। কখনো তা আসে নিঃশব্দে—মানসিক অশান্তি হয়ে, সম্পর্ক ভেঙে গিয়ে, সম্মান হারিয়ে। মানুষ তখন বলে—“কিছুই ভালো লাগছে না।” কিন্তু প্রকৃত বিচারকারীর হিসাব তখনই কার্যকর হয়।
যারা আজ অন্যায়ের শিকার, তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্য হলো—ধৈর্য মানে দুর্বলতা নয়। ধৈর্য মানে সময়কে সাক্ষী রাখা। আল্লাহ কাউকে কাঁদিয়ে আনন্দ পান না। কিন্তু অন্যায়কে পুরস্কৃতও করেন না। আপনার সহনশীলতা, নীরবতা, ধৈর্য—সবকিছুরও ওজন আছে।
সমস্যা হলো—আমরা দ্রুত ফল চাই। আজই প্রতিশোধ, আজই বিচার। কিন্তু তা হলে সেটা মানুষের বিচার হতো, আল্লাহর নয়। আল্লাহর বিচার নিখুঁত, কারণ সেখানে কোনো আবেগ, কোনো ভুল, কোনো মিসক্যালকুলেশন নেই।
এই লেখা কাউকে ভয় দেখানোর জন্য নয়। এটি একটি আয়না। যে আজ অন্যায় করছে, সে যেন ভেবে দেখে। আর যে আজ অন্যায়ের নিচে চাপা পড়েছে, সে যেন হাল ছাড়ে না।
কারণ শেষ পর্যন্ত সত্য একটাই—
প্রকৃতি হিসেব রাখে।
আল্লাহ ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না।
আর সময়ই হলো সেই নীরব আদালত, যেখানে কোনো উকিল লাগে না, কোনো সাক্ষী লাগে না—শুধু সত্য দাঁড়িয়ে থাকে।
যদি এই কথা আপনার হৃদয়ে দানা বাঁধে, পোস্টটি শেয়ার করুন। কারো ইনবক্সে নয়, টাইমলাইনে দিন। কারণ কিছু সত্য ব্যক্তিগত নয়, সামষ্টিক।
#সময়ই_শেষ_বিচারক
#আল্লাহ_উত্তম_বিচারক
#অন্যায়_টেকেনা
#ধৈর্য_অবশ্যক
#সত্য_অপরাজেয়