ছেলে ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্য কোনো সমাজ বা ধর্মের তৈরি নয়—এটা সৃষ্টিগত ও প্রাকৃতিক বাস্তবতা। পৃথিবীর সব ধর্ম, সংস্কৃতি ও নৈতিক দর্শনই এই পার্থক্যকে স্বীকার করেছে। এই পার্থক্য মানেই বৈষম্য নয়, আবার সমতা মানেই এক হয়ে যাওয়া—এটাও নয়।
আমি একজন মেয়ে, এবং আমি বিশ্বাস করি—মেয়েদের সম্মান, নিরাপত্তা ও ন্যায্য অধিকার পাওয়া উচিত। কিন্তু আমি একই সঙ্গে এটাও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি—স্বাধীনতা মানে সীমাহীনতা নয়। স্বাধীনতা মানে দায়িত্বহীন আচরণ নয়। স্বাধীনতা মানে নিজের পরিচয় ও মর্যাদা বিসর্জন দেওয়া নয়।
আজকাল স্বাধীনতার আলোচনায় সবচেয়ে বেশি সামনে আসে পোশাক ও চলাফেরা। এখানে আমি স্পষ্টভাবে বলছি—পোশাক ব্যক্তিগত পছন্দ হতে পারে, কিন্তু পছন্দের সঙ্গে শালীনতা, বিবেচনা ও সামাজিক বাস্তবতার ভারসাম্য থাকা জরুরি। কারণ পৃথিবীর সব মানুষ আপনার আপন নয়—সব পুরুষ বাবা, ভাই বা স্বামী নয়। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে চলা কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয় বরং সেটা আত্মপ্রবঞ্চনা ও ঝুঁকিপূর্ণ।
সব ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাই বলে—মানুষের সৌন্দর্য ব্যক্তিগত বিষয়, আর শালীনতা মানুষের মর্যাদা বাড়ায়। নিজেকে অসংযতভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করা কোনো ধর্ম, কোনো সংস্কৃতি কিংবা কোনো বিবেকই “স্বাধীনতা” হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।
আবার এটাও পরিষ্কার করে বলা দরকার—কোনো নারীর পোশাক বা উপস্থিতি কখনোই অসভ্য আচরণের অজুহাত হতে পারে না। অন্যায় সবসময় অন্যায়, দোষ সবসময় দোষীর। কিন্তু সচেতন থাকা মানে অন্যায়কে সমর্থন করা নয়; বরং নিজেকে রক্ষা করা।
ছেলেরা দায়িত্বের কারণে বাইরে কাজ করে রাত করে বাড়ি ফেরে, সেটা প্রয়োজন ও বাস্তবতার অংশ। কিন্তু শুধুমাত্র “সমতা”র নামে মেয়েরাও একই আচরণ অনুকরণ করাকে স্বাধীনতা বলা যায় না। স্বাধীনতা মানে অনুকরণ নয়—স্বাধীনতা মানে নিজের ভূমিকা, নিরাপত্তা ও বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
আমার কাছে স্বাধীনতা মানে— নিজের সম্মান নিজে রক্ষা করা,
নিজের সীমা নিজে নির্ধারণ করা,
নিজের দায়িত্ব বোঝা,
এবং সমাজে একজন মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা।
আমি এমন স্বাধীনতার পক্ষে নই, যা মেয়েদের অশালীন করবে,মেয়েদের আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।
আমি এমন স্বাধীনতার পক্ষে, যা মেয়েদের আরও নিরাপদ, সম্মানিত ও শক্তিশালী করে।
মেয়েরা শক্তিশালী—
এই শক্তি আসে শালীনতা, আত্মসম্মান ও সচেতনতা থেকে।
ছেলেদের মতো হওয়ার চেষ্টায় নয়,
নিজের পরিচয় বুঝে চলার মধ্যেই একজন নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা।