আল- কোরআনের ব্যাকরণ নিয়ে নাস্তিকদের বিভ্রান্ত মূলক প্রশ্ন ও সংশয় নিরসন
আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ
এক নজরে অভিযোগ -
১. আল্লাহর তো কোনো লিঙ্গ নেই তাহলে তিনি নিজের ক্ষেত্রে পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার করলেন কেন??
২. আল্লাহ রব্বুল আলামিন কেন নিজের ক্ষেত্রে একবচন ব্যবহার না করে বহুবচন শব্দের ব্যবহার করেছেন??
৩. তিনি ( আল্লাহ রব্বুল আলামিন) নিজের ক্ষেত্রে কেন উত্তম পুরুষ ( ফাস্ট পারসন) ব্যবহার না করে.....???
তো চলুন শুরু করা যাক।
লেখাটাকে তিনটা পয়েন্ট এতে ভাগ করছি,
পয়েন্ট নাম্বার ওয়ান
___________________
প্রশ্ন: আল্লাহ রব্বুল আলামিন এর তো কোনো লিঙ্গ নেই, তাহলে কোরআনে তিনি নিজের ক্ষেত্রে পুরুষলিঙ্গ ব্যবহার করেছেন কেন???
জবাব
______
আমরা যদি কোরআন পড়ি তাহলে দেখতে পায় যে পবিত্র আল- কোরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ রব্বুল আলামীন নিজের ক্ষেত্রে পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন। তো অনেকের মনে হতে পারে যে আল্লাহর.........। যারা এরকম চিন্তা করেন তাদের বুঝতে হবে যে " প্রত্যেক ভাষার একটা নিদিষ্ট ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে, উদাহরণস্বরূপ ইংরেজিতে বচন দু প্রকার:
১. একবচন ও
২. বহুবচন
কিন্তু আরবিতে বচন তিন প্রকার:
১. একবচন [ হুয়া /তিনি - একটা একবচন থার্ড পারসন
২. দ্বি-বচন[ হুমা/ তারা - এটা দ্বি-বচন থার্ড পারসন] ও
৩. বহুবচন [ হুম/ দুই এর অধিক- নাম পুরুষ ]
এরকম করে আরও....... । তাই আমাদেরকে কোরআন বুঝতে হলে আরবি ব্যাকরণ অনুসারে বুঝতে হবে। এখন আল্লাহ রব্বুল আলামিন কেন নিজের ক্ষেত্রে পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন ? এই প্রশ্নের সোজাসাপটা উত্তর হলো " আরবিতে সাধারণ তো সকল ( প্রায়) ইসমগুলো পুরুষবাচক হয়। অর্থাৎ - সাধারণ তো সকল ইসমকে আরবি পুরুষবাচক শব্দ হিসাবে বিবেচনা করা হয়; কিছু ব্যাতিক্রম আছে, আর সেগুলোকে বিশেষ চিহ্নের মাধ্যমে আলাদা করে পারি।
তবুও প্রশ্ন থেকে যায় " তাহলে নারীবাচক শব্দও তো ব্যবহার করতে পার তো??
*** এখন আসি বিস্তারিত
আমাদেরকে আগে বুঝতে হবে আরবিতে পুরুষবাচক শব্দ থাকলেই সেটা পুংলিঙ্গ হয়ে যায় না।
Male/ পুরুষ -- পুংলিঙ্গ / Masculine Gender এক না
Male/ পুরুষ হলো সাধারণ তো Biological লিঙ্গ (সেক্স / জেন্ডার) / বা জীবতাত্ত্বিক পুরুষ লিঙ্গ
পুংলিঙ্গ / Masculine Gender : Gammer Related বা ব্যাকরণ সম্পর্কিত শব্দ ।
°°° আরবি-আখুন [ (ভাই)/ একেক জন একেক ভাবে লেখে, আরবি শব্দের সঠিক বাংলা করা কষ্টকর ] এই শব্দ পুরুষদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় + এটা পুংলিঙ্গ ( মানে Masculine Gender হিসাবেও ব্যবহৃত হয় ]
আবার: আরবি কিতাবুন ( একটি কিতাব/ বই) এটা একটা Masculine Gender শব্দ ( আরবিতে) কিন্তু উক্ত শব্দটা Male না [মানে বায়োলজিকালি কোনো লিঙ্গ( সেক্স) নেই ]
অনুরূপ ভাবে " আল্লাহ রব্বুল আলামিন নিজের ক্ষেত্রে পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন এর মানে এই না যে তিনি......... । যেহেতু আরবিতে স্ত্রী লিঙ্গ এর ব্যবহার নেই তাই তাকে পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার করতে হয়েছে।
[ আরবিতে লিঙ্গ দু- প্রকার ( লিঙ্গ এর আরবি জিন্স)
১. Feminine/ স্ত্রী লিঙ্গ / মুআন্নাস ( আরবিতে)
২. masculine / পুং লিঙ্গ / মুজাক্কার ( আরবিতে)
( আগেও বলেছি, এখনও বলছি " সাধারণ তো সকল আরবি ইসমকে ^নাম^ কে পুরুষবাচক লিঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করা হয়; তবে বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং চিহ্নের উপর ভিত্তি করে নারী শব্দ গুলোকে আলাদা করা যায়/ পারি / করা হয়)
* আরবিতে একটা শব্দকে ততক্ষণ পুরুষবাচক শব্দ হিসাবে ধরা হয়, যতক্ষণ তাঁর মধ্যে নারীবাচক বৈশিষ্ট্য ফুটে না উঠে ]
[ কিছু শব্দ এমন আছে যেগুলোর পুরুষবাচক শব্দ কিন্তু এর নারীরুপ নেই, আবার স্ত্রীবাচক শব্দ আছে যার পুরুষ রুপ নেই, এরকম শব্দকে নিত্য পুরুষ/ নারীবাচক শব্দ বলে -
উদাহরণস্বরূপ : রাষ্ট্রপতি - এই শব্দটা পুরুষবাচক কিন্তু এর কোনো নারীবাচক শব্দ নেই, যার কারনে এটা একটা নিত্যপুরুসবাচক শব্দ ( ভাই একটা পুরুসবাচক শব্দ এর বিপরীত / নারীবাচক শব্দ হলো বোন এরকম করে অনেক শব্দের বিপরীত আছে আবার কিছু শব্দের নেই, এটা নরমাল বিষয়,
আবার : রাধুনি এর কোনো পুরুষবাচক নেই, তবুও আমরা এই শব্দ নারী পুরুষ দু- জনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করি ]
এখন বুঝতে পেরেছেন কেন আল্লাহ রব্বুল আলামিন নিজের ক্ষেত্রে........ ।
[ এর মানে এই না যে তিনি পুরুষদের ( দুনিয়ার) মতো, মনে রাখতে হবে আল্লাহর সদৃশ কিছুই নেই ( সূরা ইখলাস,আয়াত-৪) ]
পয়েন্ট নাম্বার টু
___________________
প্রশ্ন: আল্লাহ কেন নিজের ক্ষেত্রে বহুবচন শব্দের ব্যবহার করেছেন??
জবাব
______
প্রথমে আলোচনা করব আল্লাহ রব্বুল আলামীন কেন অনেক সময় নিজের ক্ষেত্রে এক বচন ব্যবহার না করে বহুবচন ব্যবহার করেছেন। একটা আয়াত দেখুন, আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র আল কোরআন বলছেন যে " اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ وَ اِنَّا لَہٗ لَحٰفِظُوۡنَ ﴿۹﴾
ইন্না-নাহনুনাঝঝালনাযযি করা ওয়া ইন্না-লাহূলাহা-ফিজূ ন।
আমিই জিকর (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই উহার সংরক্ষক।
Verily We: It is We Who have sent down the Dhikr (i.e. the Quran) and surely, We will guard it (from corruption)." এটা সূরা আল হিজর এর ৯ নাম্বার আয়াত। এখানে আল্লাহ রব্বুল আলামিন নিজের ক্ষেত্রে একবচন শব্দ" আমি" ব্যবহার না করে বহুবচন শব্দ " আমরা" করেছেন। এরকম ভাবে আল্লাহ রব্বুল আলামিন অনেক আয়াতে নিজেকে নাহনু( আমরা) ব্যবহার করেছেন। আসলে এটা আরবি ব্যাকরণ এর একটা রীতি৷ যাকে আরবি ব্যাকরণের ভাষায় যমীরুল আযমাহ বলে। যমীরুল আযমাহ এর সোজা- সাপ্টা বাংলা করলে হয় মহিমা জ্ঞাপক সম্বন্ধ বা সর্বনাম। এটা শুধু আরবি ভাষায় না, বরং হিন্দি আরবি, ইংরেজি স্প্যানিশসহ বিভিন্ন ভাষায় এই রীতি লক্ষ্য করা যায়। যেমন ইংরেজি ভাষায় নিজেকে কেও এক বচন এর পরবর্তীতে বহুবচন শব্দ দিয়ে প্রকাশ করে যাকে Royal plural বলে। অনেকে আবার রয়েল পলুরালকে রয়্যাল উই ও বলে থাকে। যাইহোক দুটোর মানে একটাই। একে উর্দু আর হিন্দিতে হাম বলে থাকে। আবার ল্যাটিন ভাষায় একে ' প্লুরালিস ম্যাজেসটাসিস বলে। সাধারণ তো ইংরেজি আর ল্যাটিন এতে এই Grammatical term টা Nosism নামে পরিচিত অনেকের কাছে। এরকম করে এই রীতি আরও অনেখ ভাষাতেই আছে। কিন্তু নাস্তিকরা ওগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলে না। কেন রে বড় ভাই এরকম দ্বিমুখীনীতি কেন? । তো আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এই মর্যাদা জ্ঞাপক বহুবচন ব্যাবহার কখনোই কোনো ভাষার ক্রুটি হিসাবে ধরা হয় না। এটা যার যার নিদিষ্ট ভাষার ক্ষেত্রে অতি স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আশা করি এই পয়েন্ট ক্লিয়ার।
পয়েন্ট নাম্বার থ্রি
________________
এখন আসি, আল্লাহ রব্বুল আলামিন কেন অনেক সময় উত্তম পুরুষ ( ফাস্ট পারসন) এর ব্যবহার না করে তৃতীয় পুরুষ ( থার্ড পারসন) কেন ব্যবহার করেছে? ।
প্রথমেই বলে রাখি যে আরবি ব্যাকরণে অনেক সময় উত্তম পুরুষ এর বদলে ৩য় পুরুষ এর ব্যবহারকে ইলতিফাত বলে। ইলতিফাত এর সোজা- সাপ্টা বাংলা করলে হয় ' কোনো দিকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বা ফিরিয়ে নেওয়া। একে ( ইলতিফাত) আস- সরফ, ই- তিরাদ, তালওয়ীনুল খিতাব,তালওয়ীন, ইনসিরাফ ও বলা হয়ে থাকে। এই নীতিটা আরবি ভাষায় অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। মানে আল কোরআন নাযিলেরও আগে থেকে। যখন বক্তা একই ধরনের বক্তব্যে স্থির না থেকে মাঝে- মধ্যে বক্তব্যে পুরুষ ( Gender) পরিবর্তন করে তখনই মূলত তাকে আরবি ভাষায় ইলতিফাত বলে।
সাধারণ তো এটি আরবি ভাষায় একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য যা বক্তা প্রয়োজন মাফিক পরিবর্তন করতে পারে, এতে করে ভাষার নমনীয়তা, সূক্ষ্মতা বজায় থাকে। তা ছাড়া শ্রোতার আকর্ষণ বা বিরক্তিও দূর করে থাকে।
আরবি ইলতিফাত অনেক ভাবেই হতে পারে। যেমন :
১. পুরুষে ইলতিফাত
২. বচনে ইলতিফাত
৩. খিতাব বা সম্বোধনে ইলতিফাত
৪. কাল এর ইলতিফাত ( কাল/ সময় মানে Tense)
কিন্তু আমরা সাধারণ তো পবিত্র আল কোরআন এতে বিশেষ্যের পরিববর্তে বিশেষণ ব্যবহার করে ইলতিফাত লক্ষ্য করি৷ আরেকটা ইলতিপাত লক্ষ্য করা যায়, যা হলো Gender ইলতিফাত।
এখন আসি কেন ইলতিফাত করা হয় -
* ইলতিফাত অনেক প্রাচীন একটা বিষয়, যা সাহিত্যে অধিক পরিমাণে ব্যবহিত হয়, কোরআন যেহেতু আরবি ভাষার সাহিত্যে সর্ব উৎকৃষ্ঠ উদাহরণ তাই এতে ইলতিফাত থাকবে সেটা স্বাভাবিক। ইলতিফাত ব্যবহারে আল কোরআন হয়েছে শ্রতিমধুর । এখানে কাব্যিক ভাব আনার জন্য ইলতিফাত ব্যবহার হয়েছে।
এছাড়াও আরও অনেক পয়েন্ট আছে। এতটুকুই যথেষ্ট মনে করছি তাই আর দীর্ঘ করছি না। এই বিষয়ে একজন আলেম এর কাছ থেকে অনেক গভীর ভাবেই জেনে নিতে পারবেন জিগ্যেস করে। তো আশা করছি এই লেখার তিনটা পয়েন্ট আপনারা বুঝেছেন। নাস্তিকদের একটা কথা বলে যায় " সেই সময়কার বড় বড় আরবের কবি, সাহিত্যেকরা এই বিষয়ে ভুল ধরতে পারলো না আর তোমরা ভুল ধরে ফেললে, বাহ কি চমৎকার। তোমাদের কলা তত্ত্বের জ্ঞান নিজেদের কাছেই রাখো।
তো লেখাটা এই পযন্তই।
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
মোঃ মেহেদী হাসান ✍️
আল্লাহ হাফেজ, আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ
প্রিন্স ফ্রেরাসে