আল কোরআনের ভবিষ্য বাণী
আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ
আশা করি প্রিয় বন্ধুরা সবাই অনেক ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ , আল্লাহ রব্বুল আলামীন এর অশেষ রহমতে আমি অনেক ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ৷ পবিত্র আল কোরআন যে এক ঐশীগ্রন্থ, সেটা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।আর এই আল কোরআন কে বিভিন্ন দিক দিয়ে প্রমাণ করা যায় যে, এই আল কোরআন এক ঐশীগ্রন্থ। তেমনই এক দিক হল আল কোরআনের ভবিষ্যৎ বাণী ও তার সভ্যতা।
তাই আজকে আলোচনা করব আল কোরআনের ভবিষ্যৎ বাণী ও তাঁর সভ্যতা নিয়ে ইনশাআল্লাহ।
তো চলুন শুরু করা যাক।
★ আমরা জানি যে মক্কার কাফের সম্প্রদায় এর অত্যাচারে টিকতে না পেরে আল্লাহ রব্বুল আলামিন এর আদেশে হজরত মুহাম্মদ সাঃ এবং তাঁর সাহাবীরা মদিনায় অবস্থান করে। যখন তারা মদিনায় প্রবেশ করে তখন তাদের মাথা গুজার থায় ছিল না। তাদের দিন পার হতো একটা ছোট্ট কুড়ে ঘরে। সেই সময় আল্লাহ রব্বুল আলামিন নাযিল করলেন সূরা ফাতহ এর ২৭ নাম্বার আয়াত, যেখানে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন " لَقَدۡ صَدَقَ اللّٰہُ رَسُوۡلَہُ الرُّءۡیَا بِالۡحَقِّ ۚ لَتَدۡخُلُنَّ الۡمَسۡجِدَ الۡحَرَامَ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ اٰمِنِیۡنَ ۙ مُحَلِّقِیۡنَ رُءُوۡسَکُمۡ وَ مُقَصِّرِیۡنَ ۙ لَا تَخَافُوۡنَ ؕ فَعَلِمَ مَا لَمۡ تَعۡلَمُوۡا فَجَعَلَ مِنۡ دُوۡنِ ذٰلِکَ فَتۡحًا قَرِیۡبًا ﴿۲۷﴾
লাকাদ সাদাকাল্লা-হু রাছূলাহুর রু’ইয়া-বিলহাক্কি লাতাদখুলুন্নাল মাছজিদাল হারা-মা ইন শাআল্লা-হু আ-মিনীনা মুহালিলকীনা রুঊ’ছাকুম ওয়া মুকাসসিরীনা লা-তাখাফূনা ফা‘আলিমা মা-লাম তা‘লামূফাজা‘আলা মিন দূ নি যা-লিকা ফাতহান কারীবা-।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসূলের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছেন, আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে - কেহ কেহ মাথা মুন্ডন করবে, কেহ কেহ কেশ কর্তন করবে; তোমাদের কোন ভয় থাকবেনা। আল্লাহ জানেন, তোমরা যা জাননা। এটা ছাড়াও তিনি তোমাদের দিয়েছেন এক সদ্য বিজয়।
Indeed Allah shall fulfil the true vision which He showed to His Messenger (SAW) [i.e. the Prophet SAW saw a dream that he has entered Makkah along with his companions, having their (head) hair shaved and cut short] in very truth. Certainly, you shall enter Al-Masjid-al-Haram; if Allah wills, secure, (some) having your heads shaved, and (some) having your head hair cut short, having no fear. He knew what you knew not, and He granted besides that a near victory."
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে হে নবী আপনি মসজিদুল হারামে প্রবেশ করুন, এবং মাথা মন্ডন করুন। এই আয়াতের শেষে বলা হচ্ছে যে আপনাদের জন্য আসন্ন হচ্চে এক মহা বিজয়। এি আয়াত উল্লেখ হওয়ার সময় তারা হুদাইবিয়া সন্ধি করেন। আর একটা সময় আমরা মুসলিমরা সমগ্র আরব ভূখন্ডকে দখল করে ফেলি। এমন এক সময় এি আয়াত নাযিল হয় যকন আমাদের অবস্থা ছিল অস্তিত্বহীন এর দারপ্রান্তে। আর তখন আমাদের বলা হইছে নিশ্চয় তোমাদের জন্য রয়েছে এক আসন্ন বিজয়। যা পরবর্তী মক্কা বিজয় এর সাথে সাথে বাস্তবায়িত হয়। আমরা বিনা যুদ্ধে ও বিনা রক্তপাতে বিজয় লাভ করি।
★রোমান আর ইরানীয়দের যুদ্ধের কতা তো আমরা সবাই জানি। রোমানরা প্রথম দিকে ইরানীয়দের কাছে এমন ভাবে যুদ্ধে পরাজিত হতে থাকে যে , একটা সময় তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা সেইটা নিয়েই চিন্তাই পরে গিয়েছিল। মক্কার কাফের রা তখন নবীজিকে বল তো যে আমরাই ওই রোমনদের মতো তোমাদের শেষ করে ফেলব, যখন কাফেররা এই কথাগুলো বল তো তখন সাহাবারা অনেক ভয় পেয়ে যে তো। তখন আল্লাহ রব্বুল আলামিন সূরারোম এর আয়াত নাযিল করলেন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন সূরা রোম এর ২ থেকে ৩ নাম্বার আয়াতে বলেন যে " আয়াত-২, غُلِبَتِ الرُّوۡمُ ۙ﴿۲﴾
গুলিবাতির রূম।
রোমকরা পরাজিত হয়েছে –
The Romans have been defeated.
আয়াত - ৩, فِیۡۤ اَدۡنَی الۡاَرۡضِ وَ ہُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ غَلَبِہِمۡ سَیَغۡلِبُوۡنَ ۙ﴿۳﴾
ফীআদনাল আরদিওয়াহুম মিম বা‘দি গালাবিহিম ছাইয়াগলিবূন।
নিকটবর্তী অঞ্চলে; কিন্তু তারা তাদের এই পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হবে –
In the nearer land (Syria, Iraq, Jordan, and Palestine), and they, after their defeat, will be victorious.
আয়াতের শেস অংশে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলচেন যে রোমানরা অতি শীঘ্রই বিজয় লাব করবে। এই আয়াত এমন সময় নাযিল হয় যখন তারা নিজেদের অস্তিত্ব থাকবে কিনা সেই বিষয়েই সন্দেহ ছিল। আর ওি সময়ে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলে দিলেন রোমনরা বিজয় লাব করবে। টই আয়াত নাযিল হওয়ার ঠিক ৯ বছর পর রোমরা বিজয় লাব করে, সুবহানাল্লাহ । আর এই ভাবেই এই আয়াতের সভ্যতার ভবিষ্যৎ বাণীর প্রমাণ হয়।
★ সূরা আল কাউসার, যেটা হল পবিত্র আল কোরআনের সবচেয়ে ছোট সূরা। এই সূরা এমন সময় নাযিল হয় যখন তার পুত্ররা মারা যায়, এবং দ্বিতীয় পুত্র না হওয়ায় মক্কার কাফের - মুশরিকরা বলতে থাকে যে হে মুহাম্মদ ( সাঃ) তোমার বংশ তো নির্বংশ হয়ে গিয়েছে। তুমি মারা গেলে তো তোমার নাম নেওয়ার মতো কেও থাকবে না। আর তখন আল্লাহ রব্বুল আলামিন সূরা কাওসার নাযিল করেন, এবং সেখানে বলে দেন যে "
আয়াত-১, اِنَّاۤ اَعۡطَیۡنٰکَ الۡکَوۡثَرَ ؕ﴿۱﴾
ইন্নাআ‘তাইনা-কাল কাওছার।
আমি অবশ্যই তোমাকে কাওছার দান করেছি,
Verily, We have granted you (O Muhammad (Peace be upon him)) Al-Kauthar (a river in Paradise);
আয়াত-২, فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ ؕ﴿۲﴾
ফাসালিল লিরাব্বিকা ওয়ানহার।
সুতরাং তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর।
Therefore turn in prayer to your Lord and sacrifice (to Him only).
আয়াত-৩ اِنَّ شَانِئَکَ ہُوَ الۡاَبۡتَرُ ٪﴿۳﴾
ইন্না শা-নিআকা হুওয়াল আবতার।
নিশ্চয়ই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীইতো নিবংর্শ।
For he who makes you angry (O Muhammad (Peace be upon him)), - he will be cut off (from every good thing in this world and in the Hereafter)."
আল্লাহ রব্বুল আলামিন এখানে সুস্পষ্ট ভাবে বলে দিচ্ছে যে একটা সময় তোমাদের( ওইসব কাফের - মুশরিকদের) কোনো বংশধর থাকবে না। আর আমরা ইতিহাসে দেখেছি যে কিভাবে তাদের করুন মৃত্যু হয়েছিল এবং তাদের সন্তানরা কি করেছিল। আর বর্তমানে ওইসব কাফেরদের নাম - নিশানও নেয়, কিন্তু হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর নাম দিনে কোটি কোটি মুসলিম নিচ্ছে। আমরা প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে তার উপর দরুদ পাঠ করছি।
★ ফেরাউন, প্রত্যেক মুসলিম জীবনে একবার হলেও তার নাম তো অবশ্যই শুনেছেন। যে কিনা নিজেকে রব দাবি করেছিল। যখন সে নীল নদে ডুবে যাচ্ছিল তকন সে বলেছিল যে " আমি বিশ্বাস করছি যে কোনো মাবুদ নেয় আল্লাহ রব্বুল আলামীন ছাড়া "। যেহেতু তার সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল আর পৃথিবী থেকে বিদায় বিবে তখন আল্লাহ রব্বুল আলামিন বললেন যে আমি তেমার লাশ সংরক্ষণ করে রাখব। এই কাহিনীটা নবীজিরও জন্মের হাজার বছর আগের। আর এই কাহিনীটা আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র আল কোরআনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন যে فَالۡیَوۡمَ نُنَجِّیۡکَ بِبَدَنِکَ لِتَکُوۡنَ لِمَنۡ خَلۡفَکَ اٰیَۃً ؕ وَ اِنَّ کَثِیۡرًا مِّنَ النَّاسِ عَنۡ اٰیٰتِنَا لَغٰفِلُوۡنَ ﴿٪۹۲﴾
ফালইয়াওমা নুনাজজীকা ব্বিাদানিকা লিতাকূনা লিমান খালফাকা আ-য়াতাওঁ ওয়া ইন্না কাছীরাম মিনান না-ছি ‘আন আ-য়া-তিনা-লাগা-ফিলূন।
অতএব আমি আজ তোমার লাশকে উদ্ধার করব, যেন তুমি তোমার পরবর্তী লোকদের জন্য উপদেশ গ্রহণের উপকরণ হয়ে থাক; আর প্রকৃত পক্ষে অনেক লোক আমার উপদেশাবলী হতে উদাসীন রয়েছে।
So this day We shall deliver your (dead) body (out from the sea) that you may be a sign to those who come after you! And verily, many among mankind are heedless of Our Ayat (proofs, evidences, verses, lessons, signs, revelations, etc.).
আর এই কোরআনের বলা কথার প্রমাণ তো আমরা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছি। ফেরাুনের লাশ ১৮ শতাব্দীদে কিভাবে পাওয়া গিয়েচে অক্ষত অবস্থায়, আর এই আয়াত দেখে যে একজন বিজ্ঞানীও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, সেইসব কথা তো আমরা জানি। তাই এই বিষয়ে কিছু লেখলাম না।
★৷ আবু লাহাব এর কথা তো আমরা জানি। সে যে কত বড় কাফের ছিল তা আমাদের সকলের জানা। আল্লাহ রব্বুল আলামিন এই আবু লাহাব সম্পর্কে বলেন যে" سَیَصۡلٰی نَارًا ذَاتَ لَہَبٍ ۚ﴿ۖ۳﴾
ছাইয়াসলা-না-রান যা-তা লাহাব।
অচিরেই সে শিখা বিশিষ্ট জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে,
He will be burnt in a Fire of blazing flames!"।
যখন এই আয়াত নাযিল হয় তখন সে ছিল কাফের। আমরা যখন মক্কা বিজয় করি তখনও সে কাফের ছিল, যখন সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। তকন সে চাইলেই ইসলাম কবুল করে এই আয়াতকে ভুল প্রমাণ করে দিতে পার তো। কিন্তু তা সে করে নায়, বরং আবু লাহাব নিজ বাপ- দাদার ধর্মেই রয়ে গেল। আর তার এই কর্মের কারনে...... ( কি লেখব তা বুঝতেই পারছেন, তাই আর লেখলাম না) ।
এই হল আল কোরআনে বর্ণিত ভবিষ্যৎ বাণী। এই রকম আরও অনেক কথা আমরা আল কোরআন ও হাদীস থেকে পায়, যা ভবিষ্যৎ এতে সত্য প্রমাণ হয়।
আর এই ভবিষ্যৎ বাণীর দিক গুলোও প্রমাণ করে যে আল - কোরআন সত্য এবং এই কিতাব এক ঐশীগ্রন্থ।
তো আজকের মতো লেখা এই পযন্তই,
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
কলমে : মোঃ মেহেদী হাসান
আল্লাহ হাফেজ, আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ