জীবনের কিছু সময় আসে, যখন মানুষ ভেতর থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কষ্ট তখন শুধু পরিস্থিতির থাকে না—মন, বিশ্বাস আর ধৈর্যের ওপরও চাপ ফেলে। চারপাশে মানুষ থাকে, তবু মনে হয় আমি একা। ঠিক সেই মুহূর্তগুলোতে কুরআনের কিছু আয়াত নীরবে এসে হৃদয়ের ভেতর আশ্রয় তৈরি করে।
আমি যখন কষ্টে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তখন এই আয়াতটি আমার মনকে শান্ত করে—
নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।
(সূরা ইনশিরাহ : ৬)
এই আয়াত আমাকে মনে করিয়ে দেয়—কষ্ট কখনো একা আসে না। আল্লাহ কষ্টের সাথেই স্বস্তি রেখেছেন, শুধু তা প্রকাশ পেতে সময় লাগে।
যখন মনে হয়—এই বোঝা আর বহন করা সম্ভব নয়, তখন এই আয়াতটি আমাকে শক্ত করে ধরে—
আল্লাহ কাউকেই তার সামর্থ্যের বাইরে কষ্ট দেন না।
(সূরা বাকারা : ২৮৬)
এই কথাটি আমাকে সাহস দেয়। বুঝিয়ে দেয়—আমি যতটা দুর্বল ভাবছি, আল্লাহ আমাকে তার চেয়েও বেশি শক্ত জানেন।
ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়, অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তা যখন বুক চেপে ধরে, তখন এই আয়াতটি আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায়—
আল্লাহর ওপর ভরসা করাই যথেষ্ট।
(সূরা তাওবা : ১২৯-এর অর্থগত শিক্ষা)
এই আয়াত শেখায়—সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে না থাকলেও, সব কিছুর মালিক আল্লাহ।
অনেক সময় দোয়া করি, চোখের পানি ফেলি, কিন্তু ফল চোখে পড়ে না। তখন হতাশা আসে। ঠিক তখনই এই আয়াতটি ধৈর্য ধরতে শেখায়—
হতে পারে তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ, অথচ সেটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর।
(সূরা বাকারা : ২১৬)
এই আয়াত আমাকে বুঝিয়ে দেয়—যা হারাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে, সেটাই হয়তো আমাকে বড় কোনো ক্ষতি থেকে বাঁচাচ্ছে।
যখন মনে হয়—কেউ বুঝছে না, কেউ পাশে নেই—তখন এই আয়াতটি বুক ভরে স্বস্তি দেয়—
নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।
(সূরা রা‘দ : ২৮)
মানুষ বদলে যায়, পরিস্থিতি বদলায়—কিন্তু আল্লাহকে স্মরণ করলে ভেতরের শান্তিটুকু টিকে থাকে।
মানুষ যখন কষ্ট দেয়, অবহেলা করে, কথা দিয়ে আঘাত করে—তখন এই আয়াতটি নীরব শক্তি হয়ে দাঁড়ায়—
নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।
(সূরা বাকারা : ১৫৩)
এই আয়াত আমাকে শেখায়—ধৈর্য মানে হেরে যাওয়া নয়, ধৈর্য মানে আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকা।
যখন মনে হয়—সব দরজা বন্ধ, কোনো পথ নেই—তখন এই আয়াতটি আশার আলো দেখায়—
যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন।
(সূরা তালাক : ২)
এই আয়াত আমাকে আশ্বস্ত করে—আমি পথ দেখতে না পেলেও, আল্লাহ পথ তৈরি করছেন।
আর যখন নিজের মনেই প্রশ্ন জাগে—
আল্লাহ কি আমাকে ভুলে গেছেন?
ঠিক তখন এই আয়াতটি চোখ ভিজিয়ে দেয়—
তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেননি।
(সূরা দোহা : ৩)
এই আয়াত মনে করিয়ে দেয়—নীরবতা মানেই দূরে সরে যাওয়া নয়।
সবশেষে, যখন মন ভেঙে যায়, আশা নিভে যেতে চায়—তখন কুরআনের এই শিক্ষা আমাকে ধরে রাখে—
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া উচিত নয়।
(সূরা ইউসুফ : ৮৭-এর মূল শিক্ষা)
কুরআনের এই আয়াতগুলো আমার কাছে শুধু লেখা নয়—
এগুলো ভাঙা রাতে আল্লাহর পাঠানো সান্ত্বনা,
নিঃশব্দ কান্নার সময় সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়,
আর ক্লান্ত হৃদয়ের জন্য ভরসার ঠিকানা।
কষ্ট আসবে—এটাই দুনিয়ার নিয়ম।
কিন্তু কুরআন নিশ্চিত করে—
কষ্ট কখনো শেষ কথা নয়।
শেষ কথাটা সবসময়ই আল্লাহর রহমত। 🌸🤍