বসুর কবিতায় আমার আত্মস্বীকারোক্তি
—রফিক আতা—
যদি আমি ম’রে থাকতে পারতুম—
যদি পারতুম একেবারে শূন্য হয়ে যেতে,
ডুবে যেতে স্মৃতিহীন, স্বপ্নহীন অতল ঘুমের মধ্যে—
তবে আমাকে প্রতি মুহূর্তে ম’রে যেতে হতো না
এই বাঁচার চেষ্টায়;
খুশি হবার, খুশি করার,
ভালো লেখার, ভালোবাসার চেষ্টায়।
—এই লাইনগুলো জীবনের ভেতর প্রতিনিয়ত
তুমুলভাবে প্রতিধ্বনিত হয়।
বুদ্ধদেব বসুর “এই শীতে” কবিতার ধ্বনি যেন
আজ প্রতিটি জীবনের অন্তর্গত শব্দ।
সবাই স্বপ্ন দেখে।
স্মৃতি গদ্যে ফিরে ফিরে দেখে অতীত।
বাঁচতে চায়, স্বপ্নকে সাজাতে চায়।
আর সেই বাঁচার লড়াইটাকে কবি এক বাক্যে নামিয়ে আনেন—
মানুষের যুদ্ধ কেবল
“খুশি হবার, খুশি করার,
ভালো লেখার, ভালোবাসার চেষ্টায়।”
এই যে জীবনচক্রের শ্বাসরুদ্ধকর মানচিত্র—
এখানেই কবির মরে যেতে চাওয়া।
মৃত্যু এখানে আত্মহননের আকাঙ্ক্ষা নয়,
বরং এই অবিরাম চেষ্টার বৃত্ত থেকে
এক মুহূর্তের রেহাই।
যদি সত্যিই মরে যাওয়া যেত,
যদি ডুবে যাওয়া যেত
স্মৃতিহীন, স্বপ্নহীন অতল ঘুমে—
তবে আর দৌড়াতে হতো না
এই সব কিছুর পেছনে।
তাই মাঝে মাঝে আমিও আনমনে
এই লাইনগুলো আওড়াতে থাকি—
যখন ভীষণ মনখারাপ জমে ওঠে,
যখন জীবনযুদ্ধের কোনো এক দৃশ্যে
আমি পরাজিত হই।
যখন লিখতে ভালো লাগে না,
কলমে শব্দ নামে না,
অথবা যখন ভুল মানুষকে
ভালোবাসার মতো দুষ্কর্মের বীভৎস স্মৃতি
মনের কার্নিশে ভেসে ওঠে।
ঠিক তখন—
আমি আশ্রয় নিই এই উচ্চারণে।
যদি আমি ম’রে থাকতে পারতুম—
যদি পারতুম একেবারে শূন্য হয়ে যেতে,
ডুবে যেতে স্মৃতিহীন, স্বপ্নহীন অতল ঘুমের মধ্যে—
তবে আমাকে প্রতি মুহূর্তে ম’রে যেতে হতো না
এই বাঁচার চেষ্টায়;
খুশি হবার, খুশি করার,
ভালো লেখার, ভালোবাসার চেষ্টায়।
এই আওড়ানো মৃত্যু নয়—
এ এক ক্লান্ত জীবনের
নিজেকে টিকিয়ে রাখার
নীরব, একগুঁয়ে প্রার্থনা।
ব্যক্তিগত নিবন্ধ।
বিশ, বারো, পঁচিশ ইং
শনিবার।