প্রেম মানেই তো একটু সরলতা, একটু বোকামি, আর ‘মদন’—সে তো প্রেমের চিহ্ন...
নামটি ছিল মদন।
নামটা শুনলেই যেন মনে পড়ে এক কুয়াশামাখা শহরের কথা, কোনো পুরাতন প্রেমকাহিনির রঙচঙে পাতা— যেখানে এক প্রেমিক তার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে, হাসিমুখে, নিঃস্ব হয়ে।
“মদন”—একটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ শহর।
আর নেত্রকোনার সেই ছোট্ট, কোমল প্রেমময় উপজেলার নাম— মদন।
হ্যাঁ, একেবারে প্রাণবন্ত, প্রেমভরা এক শহর। হয়তো ভালোবাসার জন্যই শহর তৈরি হয়, শহর ভেঙে পড়ে আবার গড়ে ওঠে।
তবু কে জানত, এই 'মদন' একদিন ভালোবাসার প্রতীক না থেকে রয়ে যাবে ভুল বোঝাবুঝির ছায়ায় ঢাকা এক শব্দ হয়ে?
না, মদন মানে বোকা নয়। এই নামের পেছনে লুকিয়ে আছে এক নাট্য-ইতিহাস— যা আমাদের হাসিয়েছে, ভেবেছে, ভাবিয়েছে।
বিখ্যাত নাট্যকার মনোজ মিত্র তাঁর নাটকে “মদন” নামক এক চরিত্র সৃষ্টি করেন— একজন মানুষ, যিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধির ধারাল ছুরির মতো, কিন্তু মুখে আর আচরণে এমন সরল, যেন বোকা।
১৯৭৪ সালে তার রচিত নাটক ছিল— “আমি মদন বলছি” এবং “মদনের পঞ্চকাণ্ড”.
দর্শক হেসেছে, কেঁদেছে, আবার মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকেছে মঞ্চের সেই ছেলেটার দিকে— যার নাম ছিল ‘মদন’।
সেই নাটকের আলো থেকেই ‘মদন’ হয়ে উঠল হাস্যরসের প্রতীক। মানুষ ভুলে গেল নামের আসল মানে। ভুলে গেল—এই ‘মদন’ কতটা গভীর এক প্রতীক!
কিন্তু তাও, আমরা জানি— প্রেম মানেই তো একটু বোকামো, একটু সরলতা, একটু হার মানা।
হিন্দু ধর্মে “মদনমোহন”—প্রেমের দেবতা। প্রেম, কাম, আকর্ষণ ও হৃদয়ের গভীরতম অনুভবের প্রতীক। তাই তো, “মদন” শব্দটা শুধুই একটা নাম নয়— এ এক অনুভব, এক জীবনদর্শন।
আর যার হৃদয়ে প্রেম আছে, সে জগতের চোখে প্রায়শই বোকা বলেই বিবেচিত হয়। কারণ প্রেম দিয়ে যারা দেখে, তারা হিসেব করে না।
তাই বুঝি— আমরা মদনকে বোকা ভাবি, কারণ সে প্রেমিক ছিল।
“মদন” মানে শহর,
“মদন” মানে প্রেম।
আর যে নাম প্রেমের— তাকেই তো আমরা শেষপর্যন্ত…
বোকা ভাবি।