একসময় বিয়ে ছিল দুটি হৃদয়ের অটুট বন্ধন, জীবন ভর একসাথে থাকার অঙ্গীকার। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে সেই ধারণার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আজকের যুগে ডিভোর্স, বিবাহ বিচ্ছেদ এসব শব্দগুলো নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতি ব্যবহার, পরিবারের হস্তক্ষেপ, অর্থনৈতিক ও মানসিক নির্যাতন – এমন অনেকগুলো কারণে আজ দাম্পত্য সম্পর্ক ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা
বর্তমান সময়ে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, এই মাধ্যমগুলো অনেক সময় দাম্পত্য কলহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ব্যক্তিগত সমস্যা, সংসারের অশান্তি এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে আলোচনা অনেক সময় সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন
অতীতে পুরুষই ছিল পরিবারের একমাত্র অর্থনৈতিক উৎস। কিন্তু বর্তমানে নারীরা শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে সমান ভাবে অংশগ্রহণ করছে। অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ফলে নারীরা আর পুরুষের উপর অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরশীল নয়। এই স্বাধীনতা তাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ক্ষমতা দিয়েছে এবং প্রয়োজনে তারা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পিছপা হচ্ছে না।
পারিবারিক বন্ধনের ক্ষয়
পূর্বে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের পরামর্শ এবং মধ্যস্থতায় অনেক দাম্পত্য কলহ মিটে যেত। কিন্তু যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে পারিবারিক বন্ধনের সে সূত্র আলগা হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা দাম্পত্য কলহে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে বিষয়টিকে আরও জটিল করে তোলে।
ডিভোর্স: একটি ব্যর্থতার নাম নয়
ডিভোর্স কখনোই কোন সমাধান নয়, বরং একটি পরিণতি। অনেক সময় দীর্ঘ দিন ধরে চলা মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন, অবিশ্বাস, যোগাযোগের অভাবের ফলে দুজন মানুষের পক্ষে একসাথে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ডিভোর্সকেই হয়তো একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নিতে হয়।
ভবিষ্যতের পথ কোন দিকে?
দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য পারস্পরিক সম্মান, বিশ্বাস এবং যোগাযোগ অপরিহার্য। একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, ক্ষমা করতে শেখা, এবং কোনও সমস্যা হলে তা খোলাখুলি ভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও সামাজিক সচেতনতা মূলক কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে দাম্পত্য জীবনের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন।
পরিশেষে
দাম্পত্য জীবন হল দুটি মানুষের একত্রে জীবন যাপনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা যেন কখনোই বিষাদের হয়ে না ওঠে সে জন্য আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে। কারণ একটি ভাঙা পরিবার শুধুমাত্র দুজন মানুষের জীবনকেই না, একটি সমাজকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
-
টিম ই-নলেজ