পর্ব ৬: সন্ধ্যার প্রতিজ্ঞা
সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সূর্যের শেষ আলো মাটির সাথে মিশে লালাভ আভা ছড়াচ্ছে। বাতাস নরম, কিন্তু কিছুটা শীতল। অরণ্য নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে, প্রতিটি গাছ, প্রতিটি নদী, প্রতিটি পাতা যেন নীরবভাবে বলছে—“সময় এসেছে, থামো, শিখো।”
তিনি নদীর ধারে এসে বসলেন। দিনের সমস্ত ঝড়, বৃষ্টি, এবং আলো-ছায়ার খেলা মনে এলো। প্রতিটি অভিজ্ঞতা তাকে শেখিয়েছে—ভয় পেলে বা ভেঙে পড়ে সঠিকভাবে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। স্থিরতা মানে শুধু না হারানো নয়, মানে ভেতরের শক্তিকে চেনা এবং অঙ্গীকারকে পূর্ণ করা।
পাতার নরম ছায়ায় সে হাত রাখল। হাতের নিচে মাটি ঠান্ডা, ভিজে আছে, কিন্তু শক্ত। মনে হলো—প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি স্পর্শ, প্রতিটি ঝড়ের ধাক্কা, সবই তাকে নতুনভাবে বলছে—“ভেঙে পড়লেও তুমি শক্ত। হাল ছাড়ো না।”
নদী ধীরে বহমান। প্রতিটি ঢেউ তার ভেতরের অঙ্গীকারের মতো—নীরব, দৃঢ় এবং ধ্রুব। ঝড়ের পর নদীর স্রোত আরও পরিষ্কার, আরও দৃঢ় হয়ে গেছে। ঠিক তেমনি, মানুষের ভেতরের অঙ্গীকারও প্রতিটি চ্যালেঞ্জে শক্তিশালী হয়।
তিনি চোখ বন্ধ করে শোনার চেষ্টা করলেন। পাখির ডাক, পাতার দুলানো, নদীর নীরব স্রোত—সব মিলিয়ে মনে হলো, অরণ্য তার ভেতরে একটি অঙ্গীকার আঁকছে। প্রতিটি ফোঁটা বৃষ্টি, প্রতিটি নরম বাতাস, প্রতিটি শাখার দুল—সবই তাকে মনে করাচ্ছে—“ভাঙার পরেও দৃঢ় হও, পরিবর্তনের মধ্যেও নিজেকে হারিও না।”
সূর্য ডুবে গেল। ছায়া নরম, আলো ম্লান। অরণ্যের নীরব উপস্থিতি শক্ত হয়ে আছে। তিনি বুঝলেন—এখনই সময় ভেতরের প্রতিজ্ঞা পুনরায় মনে করার। প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি শ্বাস, প্রতিটি অনুভূতি—সব মিলিয়ে আজকের সন্ধ্যা তাকে বলছে—“নিজেকে খুঁজে পাও, নিজের অঙ্গীকারকে পূর্ণ করো।”
সেদিন রাতের নীরবতা যেন শান্তি ও শক্তি নিয়ে এসেছে। প্রতিটি গাছ, প্রতিটি নদী, প্রতিটি ফোঁটা—সব মিলিয়ে ভেতরের প্রতিজ্ঞা শক্ত হয়ে ওঠে। সন্ধ্যার প্রতিজ্ঞা সম্পূর্ণ হলো—ভেঙে পড়লেও, হারিয়ে গেলেও, তোমার শিকড় ও অঙ্গীকার চিরস্থায়ী।