ড. শহীদ সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা (১ মে ১৯৩৪-১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯)বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি শিক্ষাবিদ এবং অধ্যাপক।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুরা জেলায় তাঁর জন্ম। তিনি বাঁকুরা জেলা স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫০ সালে বাঁকুরা ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে আই.এসসি পাস করেন।এরপর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে ভর্তি হন।রসায়ন শাস্ত্রে তিনি ১৯৫৩ সালে বি.এসসি (সম্মান) এবং১৯৫৪ সালে এম.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন শামসুজ্জোহা বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে তিনি ১৯৫৭ সালে পুনরায় বি.এসসি (সম্মান) এবং ১৯৬৪ সালে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং একই বছর উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের লেকচারার পদে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন।১৯৬৫ সালে তিনি শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষক এবং ১৯৬৬ সালে প্রাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন।তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন।ড.শামসুজ্জোহা ছিলেন ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৯-এর ভেতরে প্রথম শহীদ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।মৃত্যুর পরে মহান এই শিক্ষককে সমাহিত করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে।যা এখন "জোহা চত্বর" নামে পরিচিত।এছাড়া শহীদ ড. জোহাকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি হলের নামকরণ করা হয় "শহীদ শামসুজ্জোহা হল"।১৮ ফেব্রুয়ারী "ড. জোহা দিবস" হিসেবে পালন করে আসছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিবসটি পালনের জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।নাটোরে তার নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়।এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ পক্ষ থেকে প্রতিবছর জোহা সিম্পজিয়াম পালন করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি দেশের শিক্ষকসমাজ জোহার মৃত্যুদিবসকে "জাতীয় শিক্ষক দিবস" হিসেবে পালনের দাবী জানিয়ে আসছে।তার নামানুসারে নির্মিত আবাসিক হল শহীদ শামসুজ্জোহা হলের মূল ফটকের পাশে ২০১২ সালে একটি স্মৃতি স্মারক স্ফুলিঙ্গ নির্মাণ করা হয়।তিনি ২০০৮ সালে "স্বাধীনতা পদক" এ ভূষিত হন।
ড. শামসুজ্জোহার ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস।তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পরও মফস্বলের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করাকে শ্রেয়জ্ঞান করেছিলেন।শহীদ ড. শামসুজ্জোহা বাঙালীর বীরত্বময় গৌরবগাথা ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন,তাঁর রক্তের পথ ধরেই পতন ঘটেছে লৌহমানব সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের,এসেছে ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে বাঙালীর বিজয়, মুক্ত হয়েছেন বাঙালীর অবিসংবাদিত মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর সহযোগীরা আগরতলা ষড়যন্ত্র অভিহিত মামলা থেকে।ড. শামসুজ্জোহার রক্তস্নাত পথ ধরে গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়।
[তথ্যসূত্র: গুগল]
কন্টেন্ট রাইটার: নাজাত মৃধা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
ডিপার্টমেন্ট: দর্শন বিভাগ।
সেশন:২০২১-২০২২।