"এইটা কার কবর দাদু,"৫ বছরের ছোট নাতনি নিধির কথা শুনে হঠাৎ চমকে ওঠে রহিম মিয়া তার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।তার মনে পড়ে গেলো সেই ভয়াবহ রাতের কথা যেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তার ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়েটাকে গুলি মেরে হত্যা করেছে।সেদিন সে কিছু করতে পারেনি তাই আজও নিজেকে ক্ষমা করতে পারে না রহিম মিয়া।রহিম মিয়ার সাজানো একটা সংসার ছিল।সেই সংসার ছিল সে,তার স্ত্রী আর ১ ছেলে(রতন),১ মেয়ে(মেঘলা)।মেঘলার বয়স ছিল ৭ বছর।মেঘলা একদিন ইলিশ মাছ খাওয়ার জন্য বায়না ধরে কিন্তু রহিম মিয়ার কাছে তখন মাছ কেনার মতো টাকা ছিল না।মাছ কিনতে না পেরে রহিম মিয়া খালি হাতে বাড়ি ফিরে আসে এবং বাবা মাছ না নিয়ে আসায় মেঘলা অনেক কান্না করে আর না খেয়ে দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ে।বিকালে রহিম মিয়া তার প্রতিবেশী দেলোয়ার মোল্লার থেকে টাকা ধার নিয়ে বাজারে যায় আর ১০ টাকা দিয়ে বাজারের সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে আনে।মেঘলার মা অনেক সুন্দর করে সরষে ইলিশ রান্না করে।রাতে সপরিবারে রহিম মিয়া ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খেতে বসে কিন্তু তাদের আর ভাত খাওয়া হয় না।চারদিকে গুলি,বোমা আর মানুষের চিৎকার ভেসে আসে ভাত রেখে তার বাড়ির বাহিরে বের হয়ে আসে এবং জয়নাল মৃধার কাছে শুনতে পায় পাক বাহিনী তাদের গ্রামে ঢুকে পড়েছে যাকে পাচ্ছে তাকেই মেরে ফেলছে তারা কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না।সবাই যে যার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।রহিম মিয়াও স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় একটা গুলি এসে মেঘলার গায়ে লাগে মেঘলা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে মেঘলা মারা যায়।মেঘলার মা মেঘলাকে রেখে পালিয়ে যেতে অস্বীকার করে।রহিম মিয়া তার স্ত্রী ও রতনকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয় এবং কচুরিপানার মধ্যে সারারাত লুকিয়ে থেকে প্রাণ বাঁচায়।আজও সেই করুন কাহিনি রহিম মিয়াকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।মেঘলার মা মেঘলার শোকে এক বছরের মাথায় মারা যায়।রহিম মিয়া স্বপ্নে দেখে স্বপ্নে এসে মেঘলা বলে,"বাজান,মোর আর ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খাওয়া হইলো না।"