স্টিফেন কিং :'আ গ্র্যান্ড মাস্টার স্টোরিটেলার '
স্টিফেন এডউইন কিং, যাকে আমরা সবাই চিনি মাস্টার অব হরর,কিং অব হরর,মাস্টার স্টোরি টেলার স্টিফেন কিং হিসেবে,যিনি কিনা জীবিতকালেই কিংবদন্তি খ্যাত পেয়েছেন নিজের শিল্প-সাহিত্যর জন্য। হ্যাঁ, কিং এর সাহিত্য কোন সাধারণ সাহিত্য নয়,উনার প্রতিটি বই হচ্ছে একটি করে আর্ট!স্টোরি রাইটিংয়ের প্রায় সবগুলো ক্যাটাগরিতে উনি মাস্টার। হরর,সায়েন্স ফিকশন,সাসপেন্স,ফ্যান্টাসি নিয়ে উনার অনেক কাজ আছে।এজন্যই তাকে বলা হয় 'গ্র্যান্ড মাস্টার স্টোরিটেলার '
যৌবনে মাদকাশক্তি, ভয়াবহ দুর্ঘটনা, এবং আর্থিক ব্যাপক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে স্টিফেন কিং পরিণত হয়েছেন সমসাময়িক আমেরিকায় অনেকের মধ্যে "লেখকদের লেখকে"।চলুন সেই লেখকদের লেখক সম্পর্কে জানা যাক।
কিংবদন্তি স্টিফেন কিং-এর জন্ম ১৯৪৭ সালে আমেরিকার পোর্টল্যান্ড রাজ্যের মেইন শহরে। বয়স যখন মাত্র দু-বছর তখনই তার বাবা তাদেরকে ছেড়ে চলে যায়, ফলে প্রচণ্ড দারিদ্রের মধ্যে বেড়ে ওঠেন তিনি।স্টিফেন কিং এবং তার বড়ভাই ডেভিড মায়ের কাছে বড় হয়। ছোটবেলার কিছু সময় থেকে ইন্ডিয়ানাতে কাটালেও ১১ বছর বয়স থেকে তিনি স্থায়ীভাবে মেইন-এ থাকা শুরু করেন। কিং ডারহ্যাম এলিমেন্টারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি লিসবন ফলস হাইস্কুল থেকে এবং১৯৬৬ সালে ইংরেজীতে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রী নিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ মেইন থেকে বের হন।১৯৭১ সালের শরতে হ্যাম্পডেন একাডেমীতে ইংরেজীর শিক্ষকতা করার ফাঁকে ফাঁকে উপন্যাস নিয়ে কাজ করা শুরু করেছিলেন। তাছাড়া আগে থেকে ছোট গল্প লেখা চলতেছিলই।
মেইন ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিতে তার পরিচয় ঘটেছিলো টাবিথা স্প্রুস (বর্তমানে টাবিথা কিং)-এর সাথে, ১৯৭১ সালে তারা বিয়ে করেন। টাবিথা কিং নিজেও লেখালেখি করেন, পরবর্তীতে স্টিফেন এবং টাবিথার তিন সন্তান - নাওমি কিং, জোসেফ হিলস্ট্রম কিং এবং ওয়েন কিং সকলেই বাবা-মায়ের পদচিহ্ন অনুসরণ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে স্টিফেন কিংয়ের প্রথম উপন্যাস টা প্রকাশের ঘটনাটা বেশ মজার ।প্রকাশকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে বিরক্ত এবং হতাশ হয়ে কিং রাগের মাথায় নিজের লেখা প্রথম পাণ্ডুলিপি ডাস্টবিনে ফেলে দেন। ভাগ্যিস তার স্ত্রী এটা দেখেছিলেন। তিনি স্বামীর পাণ্ডুলিপি কুড়িয়ে এনে যত্ন করে রেখে দেন। তারপর কিংকে অনুরোধ করেছেন উপন্যাসটি নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে।তারপর পুনরায় প্রকাশকদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন।এবার কিং একা নন, স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে খুঁজতে থাকেন প্রকাশক। অনেক কষ্টে এক প্রকাশককে তারা রাজীও করে ফেলেন। অবশেষে প্রকাশিত হয় তার প্রথম বই ক্যারি, ১৯৭৩ সালে, ডাবলডে প্রকাশনী থেকে। এরপর বদলে যায় এই লেখকের জীবন।
১৯৭৪ সালের ৫ ই এপ্রিল প্রকাশিত হয় হরর সম্রাটের পৃথিবী কাঁপানো উপন্যাস ক্যারি!শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে কিং হয়ে গেলেন পুরোদস্তুর ঔপন্যাসিক। সে থেকে তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি।তারপর একে একে প্রকাশিত হয় সালেম'স লট,দ্য শাইনিং এর মতো বইগুলা।
স্টিফেন কিং হচ্ছেন বিশ্বের অন্যতম বেস্টসেলার লেখক। এখন পর্যন্ত কিং এর বইগুলোর ৪০০ মিলিয়নের ও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। উনার পৃথিবী কাঁপানো বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্যারি,সালেম'স লট,দ্য শাইনিং,ইট,পেট সেমেটরি,মিসারি,দ্য স্ট্যান্ড,দ্য মিস্ট ইত্যাদি।উনার বই অবলম্বনে বানানো হয়েছে ইট,পেট সেমেটরি,ডক্টর স্লিপ,দ্য মিস্ট,স্ট্যান্ড বাই মি এর মতো জনপ্রিয় সিনেমা।উনার বই অবলম্বনে বানানো হয়েছে গ্রীণ মাইল,শশাংক রিডেম্পশন মতো ওস্কার মনয়নপ্রাপ্ত পৃথিবী কাঁপানো সিনেমা।। এছাড়াও তার অনেক ছোটগল্প, উপন্যাসিকা, উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র, টিভি সিরিজ, মিনি সিরিজ, কমিকস নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
হরর সাহিত্যর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরষ্কার বিবেচনা করা হয় ব্রাম স্টোকার এওয়ার্ড কে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ বার ব্রাম স্টোকার এওয়ার্ড মনোনীত আর জয়ী লেখক হচ্ছেন স্টিফেন কিং।পৃথিবীর মাত্র তিনজন লেখক ৬ টা ক্যাটাগরির বেশি মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের একজন হচ্ছেন স্টিফেন কিং।
২০০৩ সালে, ন্যাশনাল বুক ফাউন্ডেশন তাকে বিশিষ্ট অবদানের জন্য পদক প্রদান করে।২০১৫ সালে, তিনি সাহিত্যে তার অবদানের জন্য U.S. National Endowment for the Arts থেকে একটি ন্যাশনাল মেডেল অফ আর্টসে ভূষিত হন।২০০৪ সালে ওয়ার্ল্ড ফ্যান্টাসি অ্যাওয়ার্ড ফর লাইফ অ্যাচিভমেন্ট এবং আমেরিকার মিস্ট্রি রাইটারস থেকে ২০০৭ সালে গ্র্যান্ড মাস্টার অ্যাওয়ার্ড, ২০১৫ সালে জিতেন এডগার এওয়ার্ড ।কিং ব্রিটিশ ফ্যান্টাসি এওয়ার্ড জিতেছেন ৬ বার, ইন্টারন্যাশনাল হরর গিল্ড এওয়ার্ড জিতেছেন ২ বার,ওয়াল্ড ফ্যান্টাসি এওয়ার্ড ৪ বার, হরর গিল্ড এওয়ার্ড ৬ বার।তিনি একমাত্র আমেরিকান হিসেবে কানাডিয়ান বুকসেলারস এসোসিয়েশন থেকে লাইফটাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড পেয়েছেন।এক পরিসংখ্যানের মতে কিং তার জীবনে লেখালেখির জন্য মোটমাট ১০০ এর বেশিবার পুরষ্কার পেয়েছেন।
একবার এক ইন্টারভিউ তে কিং কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল 'আপনি লেখক না হলে আপনি কী হতেন?
উত্তরে তিনি বলেন 'লেখক না হলে আমি স্কুলের অথবা কলেজের ইংরেজি শিক্ষক হতাম। মদ্যপানের কারণে হয়তো পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি সময়ে মারা যেতাম। আমার বিয়ে এতদিন টিকতো কিনা আমি নিশ্চিত না। আমি মনে করি মানুষ যখন তার প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারে না, তখন তার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যায়।'
৭৭ বছর বয়স্ক স্টিফেন কিং এখন পর্যন্ত লিখেছেন ৭২ টি উপন্যাস আর ২০০-এর বেশি ছোটগল্প। যা-ই ঘটুক না কেন এই বয়সে এসেও তিনি দৈনিক কমপক্ষে দু'হাজার শব্দ লিখেন।
আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক হচ্ছেন স্টিফেন কিং।আমাকে বই পড়া শিখিয়েছেন হলো মার্ক টোয়েন আর স্টিফেন কিং।আমার কাছে কিং হচ্ছে একটি আবেগের নাম!
আজ ২১শে সেপ্টেম্বর হরর সম্রাটের ৭৭ তম জন্মদিন!প্রিয় লেখকের প্রতি এই ক্ষুদ্র পাঠকের জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।