“A woman knows by intuition, or instinct, what is best for herself.” – Marilyn Monroe
নারীর পুরুষ সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সৌন্দর্যের চেয়ে ঐশ্বর্য, শক্তি ও জ্ঞান—এই তিনটি গুণের প্রতি আকর্ষণ দীর্ঘকাল ধরেই দেখা গেছে। এটি শুধুমাত্র সামাজিক বা ব্যক্তিগত রুচির ব্যাপার নয়, বরং বিবর্তন, ইতিহাস এবং সমাজবিজ্ঞান দিয়ে বিশ্লেষণযোগ্য একটি প্রক্রিয়া। প্রশ্ন জাগে, কেন নারী এমন সঙ্গীকেই প্রাধান্য দেন? এটি কি শুধুমাত্র মানুষের মধ্যেই ঘটে, নাকি অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যেও দেখা যায়?
প্রথমত, ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রাচীন সমাজে পুরুষদের ভূমিকাই ছিল খাদ্যসংস্থান, নিরাপত্তা প্রদান এবং নেতৃত্ব। নারী একজন শক্তিশালী ও প্রাজ্ঞ পুরুষকে বেছে নিতেন যেন তিনি নিজের ও সন্তানদের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারেন। এই বেছে নেওয়ার পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি ছিল “survival and stability”।
প্রাচীন গ্রিক বা রোমান সভ্যতা, এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশেও দেখা যায়, জ্ঞানী ও ক্ষমতাশালী পুরুষদের প্রতি নারীদের আকর্ষণ ছিল প্রবল। প্রাচীন দর্শনের ভিত্তিতে বলা যায়—“The wise man rules not only the city, but also hearts.” ইতিহাসে যেমন চাণক্য বা সক্রেটিসের মতো পুরুষেরা শুধু তাদের জ্ঞানেই নয়, ব্যক্তিত্বেও নারীদের আকৃষ্ট করতেন।
আধুনিক যুগে এসে এই প্রবণতা আরও সুগঠিত হয়েছে। যদিও নারীরাও আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ও স্বাধীন, তবুও সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাঁরা এমন কাউকে চান যিনি মানসিকভাবে শক্তিশালী, জীবনদর্শনে পরিণত এবং দায়িত্বশীল। কারণ নারী চায় একজন এমন সঙ্গী, যিনি কেবল প্রেমিক নন, বরং জীবনপথে সহযাত্রী।
“A strong man stands up for himself, but a stronger man stands up for others.” – Ben Ferencz এই ধরণের পুরুষের প্রতিই নারীর ঝোঁক।
জীববিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে, প্রাণিজগতে এই প্রবণতা বিস্তৃতভাবে লক্ষ্য করা যায়। যেমন—ময়ূর পাখির ক্ষেত্রে, স্ত্রী ময়ূর সবচেয়ে রঙিন ও আকর্ষণীয় পুরুষকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়। সিংহ বা গরিলার দলেও স্ত্রী সঙ্গীরা সেই পুরুষকে পছন্দ করে, যে দলনেতা এবং সবল। এটি “sexual selection” নামক বিবর্তন তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে নারী এমন পুরুষকে বেছে নেয় যার গঠন, বুদ্ধিমত্তা ও সামাজিক দক্ষতা সন্তানদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমান সমাজে নারীরা অধিকতর স্বাধীন এবং আত্মনির্ভর হলেও, সঙ্গী হিসেবে এমন একজনকে চান যিনি সহানুভূতিশীল, পরিণত এবং নেতৃত্বে সক্ষম। প্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগ এবং কর্মক্ষেত্রে আগ্রগতির ফলে নারীর মনের কাঙ্ক্ষাও আরও গভীর ও চিন্তাশীল হয়েছে। একজন পুরুষের বাহ্যিক শক্তির পাশাপাশি তার অন্তর্দৃষ্টি, আবেগ সামলানোর ক্ষমতা এবং বুদ্ধিমত্তাও এখন নারী মূল্যায়ন করে।
এই প্রসঙ্গে বলা যায়— “A woman is not looking for a man to complete her, but for one who complements her.”
সবশেষে বলা যায়, নারীর শক্তিশালী ও জ্ঞানী সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ কোনো কল্পনা নয়, বরং এটি প্রকৃতি, সমাজ ও মনস্তত্ত্বের সম্মিলিত ফল। মানুষের মধ্যেই নয়, প্রাণিজগতে এই প্রবণতা বিবর্তনের অঙ্গ হিসেবে উপস্থিত। অতএব, এই বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এক প্রকার প্রজ্ঞা।