নিউরন হলো স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যকরী মৌলিক একক। নিউরনের বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। তারমধ্যে একটি বিশেষ ধরনের নিউরন হচ্ছে মিরর নিউরন।
(মিরর নিউরন হল এমন একটি নিউরন যা একটি প্রাণীর কাজ করার সময় এবং অন্য প্রাণীর একই ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার সময় উভয় ক্ষেত্রেই সক্রিয় থাকে । সুতরাং, নিউরনটি অন্যের আচরণকে "প্রতিফলিত" করে, যেন পর্যবেক্ষক নিজেই কাজ করছে। )
আচ্ছা আমরা কখনো ভেবে দেখেছি যে শিশু কিভাবে তার মাকে অনুকরণ করে তার মাতৃভাষা শেখে।। এ কাজটি মূলত হয় আমাদের মিরর নিউরনের সাহায্যে। অর্থাৎ আমরা যখন কোন ব্যক্তিকে কাজ করতে দেখি তখন আমাদের এই মিরর নিউরন সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং আমরা কোন প্রকার কাজ না করলেও এটি আমাদের মস্তিষ্কে ওই কাজের একটি প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করে এবং আমাদের মনে হয় আমরা কাজটি করছি। ঠিক তেমনি একটা বাচ্চার সামনে আমরা যখন কথা বলি তখন মিরর নিউরনের প্রভাবে তার মনে ওই ব্যক্তির ঠোট নাড়ানো বা অঙ্গভঙ্গি প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি হতে থাকে এবং তার অনুভব হয় যে সে নিজেই কথা বলছে।
মিরর নিউরনের কার্যকারীতার আরেকটি খুব ভালো উদাহরণ হতে পারে নাটক বা সিনেমা দেখার সময় আমাদের প্রতিক্রিয়া। আপনি খেয়াল করে দেখবেন যখন আপনি নাটক অথবা সিনেমা দেখার সময় কাউকে অতিরিক্ত হাসতে দেখেন বা আনন্দ পেতে দেখেন তখন আপনার ভিতরেও আনন্দের সৃষ্টি হয় এবং যখন আমরা খুব কষ্টের কোন ঘটনা নাটকের ভিতর দেখি তখন আমাদেরও যথেষ্ট পরিমাণ কষ্ট হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে তো আমরা কেঁদেই ফেলি এসব ঘটনাগুলো মিরর নিউরনের প্রভাবেই ঘটে। অর্থাৎ মিরর নিউরন আপনাকে মানুষের অনুভূতি বুঝতে সাহায্য করে। একইভাবে আমরা যখন খেলা দেখি তখন আমাদের ভিতরে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় তাতেও এই মিরর নিউরনের প্রভাব রয়েছে। খেলা দেখার সময় এই মিরাও নিউরনের কারণে আমাদের এমন অনুভব হয় যে আমরা নিজেরাই খেলায় অংশগ্রহণ করেছি এবং খেলছি তাই আমরা অতটা উত্তেজিত হয়ে যাই।
বিভিন্ন বিজ্ঞানীর মতামত :
স্নায়ুবিজ্ঞানী মার্কো ইয়াকোবোনি যুক্তি দিয়েছেন যে মানুষের মস্তিষ্কের মিরর নিউরন সিস্টেমগুলি মানুষকে অন্যান্য মানুষের ক্রিয়া এবং উদ্দেশ্য বুঝতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ইয়াকোবোনি যুক্তি দিয়েছেন যে মিরর নিউরনগুলি সহানুভূতির মতো আবেগের জন্য মানুষের ক্ষমতার স্নায়বিক ভিত্তি ।
আবিষ্কারের ইতিহাস
১৯৯০ এর দশকের দিকে ইতালির পারমা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক(জিয়াকোমো রিজোলাত্তি (Giacomo Rizzolatti), লুকো ফোগাসি (Luciano Fadiga), ভিটোরিও গাল্লেসে (Vittorio Gallese), এবং লিওনার্দো ফোগাসি (Leonardo Fogassi)) ম্যাকাক বানরের বা মস্তিষ্কের ওপর গবেষণা চালানোর সময় এ মিরর নিউরনের আবিষ্কার করেন।
কিন্তু মানব মস্তিষ্কে সরাসরি নিউরন পর্যবেক্ষণ করা কঠিন তাই পরবর্তীতে (১৯৯৫-২০০০) MRI , EEG , TMS পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষণা শুরু হয় এবং দেখা যায় মানুষের মস্তিষ্কের প্রিমোটর কর্টেক্স , সম্পূরক মোটর এলাকা , প্রাথমিক সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্স এবং ইনফিরিয়র প্যারিয়েটাল কর্টেক্সে মিরর নিউরনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মস্তিষ্কের কার্যকলাপ সংগঠিত হচ্ছে।।