পঞ্চমবারের মতো আকাশে উড়ল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট স্টারশিপ। এবং এই উড্ডয়নের মাধ্যমেই এই নভোযান একটি রেকর্ড স্থাপন করে ফেলল। মানব ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রকেট নিরাপদে লঞ্চপ্যাডে "ঝুলন্ত অবতরণ" করেছে। লঞ্চপ্যাডের দুটি রোবটিক বাহু শূন্যে থাকা অবস্থায় লুফে নিয়ে যায় রকেটটিকে। গত ১৩ অক্টোবর,২০২৪, রোববার স্টারশিপের এই অভূতপূর্ব ঘটনাকে বলা হচ্ছে ঐতিহাসিক এক অর্জন।
কেন ঐতিহাসিক এই অবতরণ?
এই অবতরণকে ঐতিহাসিক বলার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। এর আগে কোনো রকেট এভাবে ঝুলন্ত অবতরণ করেনি। প্রচলিত পদ্ধতিতে, বুস্টার রকেটগুলি মূল নভোযানকে মহাকাশে ছুড়ে দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত এবং সাধারণত মহাসাগরে পতিত হত। পরে সেগুলো জাহাজের মাধ্যমে উদ্ধার করে আবার ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হত, যদিও সবসময় তা সম্ভব হত না। কিন্তু এবার আর সাগরে নয়, সরাসরি লঞ্চপ্যাডের রোবটিক বাহুর মুঠোয় বসে গেছে রকেটটি। এরপর ধীরে ধীরে বসে পড়েছে লঞ্চপ্যাডের নির্দিষ্ট স্থানে। মানে, উৎক্ষেপণের সময় প্যাডে রকেট যেভাবে থাকে, ঠিক সেভাবে আবার জায়গা মতো বসেছে। একে "ক্যাচ অ্যান্ড রিলিজ" পদ্ধতি বলা হচ্ছে।
স্পেসএক্স-এর এই সাফল্যের তাৎপর্য
স্পেসএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই লঞ্চ সিস্টেম পুনরায় ব্যবহারের পরিকল্পনা করছিলেন। এই সাফল্যের মাধ্যমে তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠান সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেল। এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে রকেট উৎক্ষেপণ খরচ অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে। এছাড়াও, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে চাঁদ এবং মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ, সেখানে সাগরের মতো বিশাল জায়গায় রকেট অবতরণ করানো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।
স্টারশিপ: নতুন আশা
প্রায় ৪০০ ফুট লম্বা এই রকেটটি দুটি অংশ নিয়ে তৈরি: সুপার হেভি বুস্টার এবং স্টারশিপ। সুপার হেভি বুস্টার স্টারশিপকে মহাকাশে পাঠানোর পর নিজেই পৃথিবীতে ফিরে আসে। স্পেসএক্স এই রকেটকে ব্যবহার করে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে আর্টেমিস ৩ মিশনের মাধ্যমে আবার চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। এছাড়াও, শিগগিরই মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর জন্যও এই রকেট ব্যবহার করা হতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা
স্পেসএক্স-এর এই সাফল্য কেবলমাত্র একটি রকেট অবতরণের চেয়েও অনেক বেশি কিছু। এটি মানবজাতির মহাকাশ অভিযানে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আমাদের জন্য অনেক অজানা রহস্যের দুয়ার উন্মোচন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পাশাপাশি, মহাকাশ ভ্রমণকে আরও সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী করে তুলবে।
পরিশেষে
স্পেসএক্সের এই অভূতপূর্ব সাফল্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি আমাদের মনে করাচ্ছে যে, মানুষের সাহস এবং কল্পনার সীমা নেই। আশা করা যায়, এই সাফল্য আগামী দিনে আরও নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করবে।
-
টিম ই-নলেজ