পৃথিবীর ভেতরে, অনেক গভীরে, এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে! যেন পৃথিবীর ভেতরের অংশ, 'আন্তঃকেন্দ্র', ধীরে ধীরে ঘুরতে থেমে যাচ্ছে! এই রহস্যময় ঘটনা বিজ্ঞানীদের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে আমরা আশা করি এই রহস্য সমাধান করতে পারবো।
আন্তঃকেন্দ্র কী?
পৃথিবীর ভেতর দুটি অংশ আছে: 'বাইরের অংশ' (outer core) এবং 'ভেতরের অংশ' (inner core)। 'বাইরের অংশ' তরল পদার্থ দিয়ে তৈরি, আর 'ভেতরের অংশ' শক্ত, কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি। 'আন্তঃকেন্দ্র' হলো পৃথিবীর ভেতরের সবচেয়ে গভীর অংশ, যা প্রায় 5,150 কিলোমিটার (3,200 মাইল) ব্যাসের। এটি কঠিন লোহা এবং নিকেল দিয়ে তৈরি এবং প্রায় 5,500°C (9,930°F) তাপমাত্রায় গরম।
আন্তঃকেন্দ্র কীভাবে ঘোরে?
'বাইরের অংশ' তরল পদার্থ দিয়ে তৈরি হওয়ায়, এটি পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে সাথে প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহ 'আন্তঃকেন্দ্র'-কেও ঘুরতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, 'আন্তঃকেন্দ্র'-এর ঘূর্ণন 'বাইরের অংশ'-এর তরল পদার্থের 'চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন'-এর সাথেও সম্পর্কিত।
আন্তঃকেন্দ্রের ঘূর্ণন কমে যাওয়ার প্রমাণ:
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকম্পের তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে 'আন্তঃকেন্দ্র'-এর ঘূর্ণন পর্যবেক্ষণ করছেন। এই তরঙ্গগুলো 'আন্তঃকেন্দ্র'-এর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়, তরঙ্গের গতি এবং দিক পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা 'আন্তঃকেন্দ্র'-এর ঘূর্ণনের হার নির্ধারণ করতে পারেন।
সাম্প্রতিক গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, 1970-এর দশকের শেষের দিক থেকে 'আন্তঃকেন্দ্র'-এর ঘূর্ণন কমে যাচ্ছে। 2000 সালের পর থেকে, 'আন্তঃকেন্দ্র'-এর ঘূর্ণন পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না।
আন্তঃকেন্দ্রের ঘূর্ণন কমে যাওয়ার কারণ:
'আন্তঃকেন্দ্র'-এর ঘূর্ণন কমে যাওয়ার কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি 'পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন' বা 'ভূমিকম্পের প্রভাব' এর কারণে হতে পারে।এছাড়াও,
ভূমিকম্পের প্রভাব: শক্তিশালী ভূমিকম্প কোরের ঘূর্ণনকে প্রভাবিত করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
মান্টেলের সাথে ঘর্ষণ: কোর যখন মান্টেলের মধ্য দিয়ে ঘোরে, তখন তাদের মধ্যে ঘর্ষণ তৈরি হয়। এই ঘর্ষণ কোরের ঘূর্ণনকে ধীর করতে পারে।
পৃথিবীর ভেতরের অংশের ঘূর্ণন হার হ্রাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনও অজানা। তবে, বিজ্ঞানীরা কিছু সম্ভাব্য প্রভাব অনুমান করছেন:
1. দিনের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন:
ভেতরের অংশের ঘূর্ণন হ্রাস পৃথিবীর ঘূর্ণনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে দিনের দৈর্ঘ্যে ক্ষুদ্র পরিবর্তন হতে পারে।
2. চৌম্বক ক্ষেত্রের দুর্বলতা:
ভেতরের অংশের ঘূর্ণন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঘূর্ণন হ্রাস পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে দুর্বল করতে পারে, যা মহাকাশীয় বিকিরণ থেকে আমাদের সুরক্ষাকে প্রভাবিত করতে পারে।
3. ভূমিকম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি:
ভেতরের অংশের ঘূর্ণন হ্রাস পৃথিবীর ভূত্বকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে ভূমিকম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
4. জলবায়ু পরিবর্তন:
কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করছেন যে ভেতরের অংশের ঘূর্ণন হ্রাস পৃথিবীর জলবায়ুকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে এই দাবি সমর্থন করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই।
5. ভূমিগর্ভস্থ প্রবাহে পরিবর্তন:
ভেতরের অংশের ঘূর্ণন পৃথিবীর ভূমিগর্ভস্থ প্রবাহকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে খনিজ পদার্থ, তেল এবং গ্যাসের উৎসের অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে।
-
শরিউল ইসলাম