মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বিগত এক শতাব্দী ব্যাপী গবেষণা করে দেখেন যে, এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হওয়া হাজারের অধিক এক্সোপ্ল্যানেট এ নিজস্ব বায়ুমণ্ডল ও পানি রয়েছে এবং সেখানে হয়ত নিয়মিত বৃষ্টিপাত হয়। আবার সেখানে হয়ত লুকিয়ে রয়েছে আজান কোন এলিয়েন লাইফ। তবে তারা মনে করেন যে, কোন গ্রহে বৃষ্টিপাত হলেই যে, কেবল পানি বর্ষণ হবে বিষয়টি কিন্তু তা মোটেও নয়।
আমাদের পৃথিবীতে বৃষ্টি হলে অঝর ধারায় পানি নেমে আসে আকাশ থেকে। এটাই হচ্ছে আমাদের গ্রহের জন্য একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে অন্য গ্রহের ক্ষেত্রে বিষয়টি কিন্তু মোটেও এ রকম নয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, আমাদের সোলার সিস্টেমে থাকা শুক্র গ্রহের সারফেসে আকাশ থেকে সালফিউরিক অ্যাসিডের বৃষ্টি হয় এবং সূর্য থেকে প্রায় ৩০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট দূরত্বে থাকা নেপচুন গ্রহে নাকি হীরার বৃষ্টি হয়।
তাছাড়া তাঁরা এইচডি ১৮৯৭৩৩বি নামক এমন একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন যেখানে পানির পরিবর্তে নাকি কাচের বৃষ্টি হয়। তাছাড়া ওজিএলই-টিআর-৫৬বি গ্রহের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা এতটাই বেশি যে সেখানে অবিশ্বাস্যভাবে গলিত লোহার বৃষ্টি হয়। আবার বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবী থেকে ৭০ আলোকবর্ষ দূরে একটি এক্সোপ্ল্যানেট বা সুপার আর্থ ২.০ রকি প্ল্যানেট খুঁজে পেয়েছেন। সেই গ্রহের সারফেস পুরোটাই আমাদের পৃথিবীর মতো সাগর বা মহাসাগর দ্বারা আবৃত রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা প্রায় শত আলোকবর্ষ দূরে এমন এক ভয়ংকর গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন যা হাজার হাজার সক্রিয় আগ্নেয়গিরিতে ঠাসা। সেখানে নাকি প্রতিনিয়ত আগ্নেয়গিরির গলিত লাভা বর্ষণ হয়। তার এর নাম দিয়েছেন এলপি ৭৯১-১৮ ডি। এটি প্রায় ৯০ আলোকবর্ষ দূরে ক্রেটার নক্ষত্রপুঞ্জে এই গ্রহটি অবস্থান করছে। আসলে তাঁরা উচ্চ প্রযুক্তির হাবল, ইউক্লিড কিংবা শক্তিশালী জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের সাহায্যে এখনো পর্যন্ত ৫ হাজারের অধিক এক্সোপ্ল্যানেট খুঁজে পেয়েছেন। তবে এর ৯৫% কোন এলিয়েন লাইফ বা প্রাণের টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত নয়।
আসলে এই সুবিশাল মহাবিশ্ব যেন এক অপার বিস্ময় এবং অজানা রহস্যে ভরা এক স্থান। যার মধ্যে শতাধিক এক্সোপ্ল্যানেট বা সুপার আর্থ রকি প্ল্যানেটে হয়ত এলিয়েন লাইফ, নিজস্ব বায়ুমণ্ডল, পানি এবং পৃথিবীর মতো সুন্দর পরিবেশ থাকতে পারে বলে দাবি করেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। তবে এটা ঠিক যে, বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত যতগুলো সুপার আর্থ এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করেছেন তার প্রায় ৯৯% এ পৃথিবীর মতো জটিল প্রাণের অস্তিত্ব থাকার চিহ্ন খুঁজে পাননি।
তারা মূলত শক্তিশালী টেলিস্কোপ দ্বারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রেডিকশন করেন যে, সে সকল গ্রহে হয়ত এলিয়েন লাইফ টিকে থাকার মতো অনুকূল পরিবেশ থাকতে পারে। বিশেষ করে তাদের আবিষ্কৃত প্রায় সকল এক্সোপ্ল্যানেটেরই প্রাণের অস্তিও টিকে থাকার কিছু না কিছু ঘাটতি থেকে যায়। কোনোটার নক্ষত্রের সাথে দূরত্বের হেরফের থাকায় অস্বাভাবিক উচ্চ বা চরম মাত্রায় নিম্ন তাপমাত্রা দেখা যায়। আবার কিছু গ্রহে অক্সিজেন বা পানির অস্তিত্ব শনাক্ত করা গেলেও তার পরিমাণ খুবই কম। কোনোটায় আবার কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ খুবই বেশি।
তারপরেও বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, অত্যন্ত দূরে অবস্থান করায় এ সকল এক্সোপ্ল্যানেট এ ক্ষুদ্র আকারের ব্যাক্টেরিয়া জাতীয় প্রাণী টিকে থাকতে পারে বা বেচে থাকার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আমাদের পৃথিবীতে এমন কিছু ব্যাক্টেরিয়া রয়েছে যা কিনা চরম প্রতিকূল পরিবেশে এবং অত্যধিক কিংবা নিম্ন তাপমাত্রায় বেঁচে থাকার রেকর্ড রয়েছে। এমনকি আমাদের পৃথিবীতে কিছু হাইপারথার্মোফ্লিক ব্যাক্টেরিয়া রয়েছে যা কিনা অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় ফুটন্ত পানিতেও বেঁচে থাকতে পারে।
তবে মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণী বেচে থাকার মতো জটিল ইকো সিস্টেমের কোন গ্রহ এখনো পর্যন্ত খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা। তবে অদূর ভবিষ্যতে উচ্চ প্রযুক্তির কল্যাণে এই সুবিশাল মহাবিশ্বে বিশেষ করে আমাদের এই এক লক্ষ আলোকবর্ষ ব্যাপী বিস্তৃত আকাশগঙ্গা ছায়াপথে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ট্রিলিয়ন পরিমাণ গ্রহ কিংবা উপগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। যদিও এ সকল এক্সোপ্ল্যানেট পৃথিবী থেকে এতটাই দূরে রয়েছে যে সেখানে বর্তমানে মানবজাতির হাতে থাকা প্রচলিত প্রযুক্তির স্পেসক্রাফট দিয়ে সেখানে যাওয়া কিংবা স্পেস মিশন পরিচালনা করা এক কথায় অসম্ভব বলা চলে।
-
সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman),
শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।