গায়ে কাঁটা: কেন হয়, কীভাবে হয়?
ঠান্ডার দিনে হঠাৎ এক ঝাঁক বাতাসের আঘাতে, ভয়ের কোনো দৃশ্য দেখে, কিংবা কখনও কখনও প্রিয় স্মৃতি মনে পড়ে গেলেও আমাদের গায়ে কাঁটা দিতে পারে। এই অদ্ভুত অনুভূতি, যাকে আমরা "কাঁটা দেওয়া" বলি, তা আসলে আমাদের শরীরের এক অতি পরিচিত প্রতিক্রিয়া। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন কেন এমনটা হয়? চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক এই রহস্যের উত্তর।
কাঁটা দেওয়ার কারণ
গায়ে কাঁটা দেওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
১. ঠান্ডা
ঠান্ডা আবহাওয়ায় আমাদের ত্বক যখন ঠান্ডার সংস্পর্শে আসে, তখন ত্বকের নিচের ছোট ছোট পেশী, যাকে বলা হয় "অ্যারেক্টর পিলি", সেগুলো সংকুচিত হয়। এই সংকোচনের ফলে ত্বকের উপরের রোমকূপগুলো খাড়া হয়ে যায়। এই ঘটনাকেই আমরা গায়ে কাঁটা দেওয়া বলে জানি।
২. আবেগ
শুধু ঠান্ডা নয়, তীব্র আবেগের সময়ও আমাদের গায়ে কাঁটা দিতে পারে। ভয়, উত্তেজনা, আনন্দ, কিংবা প্রিয় কোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলে আমাদের মস্তিষ্ক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে, যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে তোলে। এই উদ্দীপনার ফলেও "অ্যারেক্টর পিলি" পেশী সংকুচিত হয় এবং গায়ে কাঁটা দেয়।
৩. সুরক্ষা
বিবর্তনের ধারায়, এক সময় ঘন লোম ছিল মানুষের দেহে। ঠান্ডা থেকে বা কোনো বিপদ থেকে রক্ষা পেতে এই লোম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। বিপদের সম্মুখে লোম খাড়া হয়ে উঠত, যার ফলে প্রাণীটি দেখতে আরও বড় এবং ভয়ঙ্কর মনে হত। এই আচরণ প্রাণীটিকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করত। যদিও মানুষ এখন আর ঘন লোমে ঢাকা নয়, তবুও এই প্রাচীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া আজও আমাদের মধ্যে বিদ্যমান।
কাঁটা দেওয়ার বিজ্ঞান
গায়ে কাঁটা দেওয়ার বৈজ্ঞানিক নাম হল "পাইলোএরেকশন"। এই প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র, বিশেষ করে সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্র। ঠান্ডা, ভয় বা অন্য কোনো উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়ায় এই স্নায়ুতন্ত্র "অ্যারেক্টর পিলি" পেশীতে সংকেত প্রেরণ করে, যার ফলে পেশীগুলো সংকুচিত হয় এবং রোমকূপ খাড়া হয়ে যায়।
কাঁটা দেওয়া কি ক্ষতিকারক?
সাধারণত গায়ে কাঁটা দেওয়া কোনো রোগের লক্ষণ নয়। এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া মাত্র। তবে যদি আপনার অতিরিক্ত হারে বা অস্বাভাবিক ভাবে গায়ে কাঁটা দেয়, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গায়ে কাঁটা দেওয়া আমাদের শরীরের একটি আশ্চর্যজনক প্রক্রিয়া। এটি আমাদের বিবর্তনের ইতিহাসের সাথে গভীরভাবে জড়িত। যদিও এই প্রক্রিয়াটি আজ আর আমাদের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য নয়, তবুও এটি আমাদের শরীরের জটিল কার্যপ্রণালীর একটি অংশ হিসেবে আজও কাজ করে যাচ্ছে।