পড়া মনে রাখতে সমস্যা হচ্ছে? লিখে লিখে পড়ে দেখতে পারেন।আজ চলুন লিখে লিখে পড়ার বিজ্ঞান টাই জানবো।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা লিখে লিখে পড়ে তারা পড়ে পড়ে শেখা ছাত্রদের তুলনায় বেশি কার্যকরভাবে শেখে। The Testing Effect নামক একটি মনস্তাত্ত্বিক ঘটনায় বলা হয় যে, লেখার মাধ্যমে শিখন মস্তিষ্কে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি গঠনে সহায়ক হয়।
লেখার সময় মস্তিষ্কে নতুন তথ্য প্রবেশ করে এবং তা আরও সুগঠিতভাবে মনে রাখা যায়। এই প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কে নতুন স্নায়বিক সংযোগ সৃষ্টি হয়, যা তথ্য সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।লেখার সময় শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতে হয়, যা মনোযোগ বাড়ায় এবং শেখার প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তোলে।
কোন জিনিস পড়ার সাথে সাথে লিখলে বা ছবি আঁকলে পড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। কারন নিউরো সায়েন্সের মতে, কিছু লিখলে বা ছবি আঁকলে ব্রেইনের অধিকাংশ জায়গা উদ্দীপিত হয় এবং ছবি বা লেখাটিকে স্থায়ী মেমরিতে রূপান্তরিত করে ফেলে। ফলে পড়াটি মস্তিষ্কতে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
শেখার হাজারো রকমফের আছে।তার মধ্যে একটি অন্যতম পদ্ধতি হলো নিউজিল্যান্ডের শিক্ষাবিদ নীল ফ্লেমিংয়ের ১৯৮৭ সালে দেওয়া VARK মডেলটা। এই মডেল অনুসারে আমরা শিখতে পারি চারভাবে, তার মধ্যে তৃতীয় ধাপ হচ্ছে R=রিড/রাইট লার্নিং:অর্থাৎ পড়ে ও তারপর সেটা নিজে লিখে শেখা।
রিড/রাইট লারনারেরা কোনো কিছু পড়ার পরে সেটা লিখে ফেললে তবেই মাথায় ঢোকে । আপনি যদি এই গোত্রে পড়েন, তাহলে প্রতিদিন এভাবে লেখার অভ্যাস করেন। আজকে কী শিখলেন, এটা লিখতে গিয়েই আপনার মনে ঢুকবে ভালো করে। দরকার হলে যেকোনো পাঠ্যবিষয় একবার পড়ে তার পরে নিজের ভাষায় লিখে দেখুন ।
সম্প্রীতি Frontiers in Psychology নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, মনে রাখার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো কাগজে-কলমে বা অন্তত ডিজিটাল স্টাইলাস ব্যবহার করে লেখা।
Norwegian University of Science and Technology বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান গবেষক এফ. আর. ভ্যান ডের উইল এবং অড্রে এল. এইচ. ভ্যান ডার মির একটি গবেষণা করেন।গবেষণার ফলাফল হলো, টাইপ করার তুলনায় হাতে লেখার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে অধিকতর নিউরাল সংযোগ দেখা যায়। তাই যা লিখছি তা আমাদের সহজেই মনে থাকে।
দশবার রিডিং পড়ার চাইতে একবার লিখে পড়া বেশি ইফেক্টিভ।পড়ার সঙ্গে লেখা কোনো বিষয় পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে সেটি খাতায় লিখতে হবে। একবার পড়ে কয়েকবার লিখলে সেটা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। পড়া ও লেখা একসঙ্গে হলে সেটা মুখস্থ হবে তাড়াতাড়ি। পরবর্তী সময়ে সেই প্রশ্নটির উত্তর লিখতে গেলে অনায়াসে মনে আসে। এ পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে হাতের লেখা দ্রুত করতে সাহায্য করে। পড়া মনে রাখতে হলে শেখার সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি লেখার অভ্যাস করতে হবে।
লিখে লিখে পড়ার সময় তিনটি ধাপ অনুসরণ করা যায় :
১ম: নোট নেওয়া- মূল বিষয়গুলো লিখে রাখা।
২য়: সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা- বড় তথ্যকে ছোট ছোট অংশে ভেঙে নিয়ে লেখা।
৩য়: অনুশীলন- বারবার লিখে অনুশীলন করা।
হাতে লেখার সময় মস্তিষ্কের একাধিক অংশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যেমন মোটর কর্টেক্স, দর্শন-সম্পর্কিত অঞ্চল এবং তথ্য গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণের সাথে সম্পর্কিত অঞ্চল যা মনে রাখার জন্য সহায়ক। কারণ লেখার ক্ষেত্রে হাতের নির্দিষ্ট চালনা ও চোখের ব্যবহার অত্যাবশ্যক। এছাড়া, তথ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই লেখা হয়। টাইপ করার জন্য অবশ্যই অনেক কম সময় প্রয়োজন। কিন্তু যদি মনে রাখাই প্রধান উদ্দেশ্য হয়, তাহলে হাতে লেখাই উত্তম।
তাই লিখে লিখে পড়াশোনা করা যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত!
-
মাহমুদুল হাসান মৃদুল,
টিম-১,ই-নলেজ।